ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) (Bangladesh Nationalist Party – BNP) এখন পর্যন্ত ১৫টি আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে। দলীয় সূত্র বলছে, ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করতে ও জোটের কৌশলগত সমন্বয়ের অংশ হিসেবেই এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও অন্য সিনিয়র নেতাদের আসনগুলোতেও বিকল্প প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবার বগুড়া-৬ (সদর) ছাড়াও ঢাকা-১৭ (গুলশান–বনানী–ক্যান্টনমেন্ট) আসন থেকেও নির্বাচন করবেন। এই আসনের প্রধান নির্বাচনি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যিনি তারেকের পক্ষে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
**ঢাকা ও চট্টগ্রামে বড় রদবদল
ঢাকা-১২ আসনে বিএনপির সাইফুল আলম নীরবের পরিবর্তে প্রার্থী করা হয়েছে যুগপৎ আন্দোলনের অন্যতম শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হককে। তিনি ‘কোদাল’ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ব্যবসায়ী মো. মাসুদুজ্জামান এর পরিবর্তে বিএনপির সাবেক মহানগর সভাপতি আবুল কালামকে প্রার্থী করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবর্তে মনোনয়ন পেয়েছেন গোলাম আকবর খন্দকার।
চট্টগ্রাম-১৪ আসনে এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদের ছেলে ওমর ফারুকের জন্য আসনটি ফাঁকা রাখা হলেও, অলি জামায়াত-নেতৃত্বাধীন জোটে চলে যাওয়ায় সেখানে বিএনপি জসিম উদ্দিনকে প্রার্থী করেছে।
চট্টগ্রাম-৪ আসনে কাজী সালাহউদ্দিনের বদলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম-১০ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে প্রার্থী করা হয়েছে, যিনি আগে চট্টগ্রাম-১১ আসনে ছিলেন। ওই আসনে এখন মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান।
অন্যান্য এলাকায় প্রার্থিতা বদল:
বগুড়া-২ আসনে ঋণখেলাপি ইস্যুতে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার প্রার্থিতা বাতিল হলেও পরে তিনি তা ফিরে পান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে সাবেক সচিব মুশফিকুর রহমানের বদলে মনোনয়ন পেয়েছেন কবির আহমেদ ভূঁইয়া।
মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে মিজানুর রহমান সিনহার স্থানে আবদুস সালাম আজাদ এবং মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে কামরুজ্জামান রতনের বদলে মনোনয়ন পেয়েছেন মো. মহিউদ্দিন আহমেদ।
ঝিনাইদহ-১ আসনে সদ্য পদত্যাগ করা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
ঝিনাইদহ-৪ আসনে গণঅধিকার পরিষদ থেকে সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া রাশেদ খানকে প্রার্থী করা হয়েছে।
নড়াইল-২ আসনে বিএনপির আসন ছেড়ে জোটসঙ্গী ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
মাদারীপুর-১ আসনে কামাল জামাল মোল্লার পরিবর্তে প্রার্থী হয়েছেন নাদিরা আক্তার।
এছাড়া যশোর-১, যশোর-৫ ও যশোর-৬ আসনেও দলীয় ও জোটগত সমীকরণে নতুন প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করেছে বিএনপি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিবর্তনগুলো শুধু কৌশলগতই নয়, বরং বৃহত্তর বিরোধী জোটকে ধরে রাখার একটি চেষ্টা। তবে মাঠপর্যায়ে এসব পরিবর্তনের প্রভাব ঠিক কেমন হবে, তা নির্ভর করবে দলীয় প্রচারণা ও প্রার্থীজনিত জনসম্পৃক্ততার ওপর।


