ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল–আশুগঞ্জ ও বিজয়নগরের একাংশ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা (Rumeen Farhana)। সোমবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তিনি নিজে উপস্থিত হয়ে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুবকর সরকারের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, আল্লাহর পরিকল্পনা মানুষের বোধগম্যের বাইরে। তিনি তার বক্তব্যে পারিবারিক রাজনৈতিক ইতিহাস টেনে বলেন, ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের জোয়ারের বিপক্ষে তার বাবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সময়ের পরিক্রমায় এসে ২০২৬ সালে তাকেও ধানের শীষের জোয়ারের বিপক্ষে স্বতন্ত্র লড়াইয়ে নামতে হচ্ছে। তার ভাষায়, আল্লাহর পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নের পথ মানুষের বোঝার বাইরে।
এরপর সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন, আপনারা যে মার্কা চান, সেই মার্কাই তার। উত্তরে উপস্থিত অনুসারীরা একযোগে ‘হাঁস’ প্রতীক চেয়ে স্লোগান দেন।
সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলাকে বাংলাদেশের অবহেলিত অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করে রুমিন ফারহানা একাধিক প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫৫ বছর পেরিয়ে গেলেও কেন এই দুই উপজেলার অবস্থা বেহাল রয়ে গেছে, কেন কোনও সংসদ সদস্য এ অবস্থার দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পারেননি, এবং কেন এখানকার মানুষ আজও তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত—এসব প্রশ্নের জবাব রাজনীতিকদের দিতে হবে।
বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, এবার পরিবর্তনের সময় এসেছে। তার মতে, এই ভোট হবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, জুলুমের বিপক্ষে। এই ভোট হবে সেই নারীর পক্ষে, যিনি দীর্ঘ ১৭ বছর রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, মামলা ও হামলার চাপে যখন অনেকেই বিপর্যস্ত ছিলেন, তখন যিনি সংসদের ভেতরে ও বাইরে দাঁড়িয়ে মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন, এই ভোট হবে তার পক্ষে।
এর আগে গত বুধবার রুমিন ফারহানার পক্ষে সরাইল উপজেলা ইউএনওর কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন উপজেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আলী হোসেন। সোমবার মনোনয়ন দাখিলের সময় তার সঙ্গে ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি হোসেন মিয়া, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক উসমান খাঁ, উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আইয়ুব হোসেনসহ কয়েকশ অনুসারী।
উল্লেখ্য, ধানের শীষের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনটি বিএনপির সমঝোতার মাধ্যমে শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই আসনে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব (Maulana Junaid Al Habib) কে প্রার্থী করা হয়েছে।
সোমবার একই দিনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব বিএনপি জোটের পক্ষ থেকে সরাইল উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির সব নেতাকর্মী তার সঙ্গে রয়েছেন এবং জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী।
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্যান্য আসনেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন প্রার্থীরা। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা–আখাউড়া) আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মুশফিকুর রহমান (Mushfiqur Rahman)। পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনে বিএনপি জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জুনায়েদ সাকি (Junaid Saki)।


