জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা ৮ দলের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় যাওয়ায় এনসিপির যেসব নেতা পদত্যাগ করেছেন, তাদের পদত্যাগপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বিকেলে রংপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি।
আখতার হোসেন বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির দুয়েকজন যারা পদত্যাগ করেছেন, সেজন্য আমরা ব্যথিত। আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। দলীয় ফোরামে অধিকাংশদের সম্মতিক্রমে আমরা সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হয়েছি। এ সিদ্ধান্ত নিয়ে যাদের ভিন্নমত আছে তাদের মতকে আমরা শ্রদ্ধা করি। তাদের পদত্যাগপত্র আমাদের কাছে জমা দিয়েছেন তা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়নি। আমরা তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলমান রাখব।
তিনি আরও বলেন, এনসিপির নেতাকর্মীরা বাংলাদেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে এবং সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশে যে গণহত্যা হয়েছে সে বিচারকে কার্যকর করা ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াইয়ে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থেকে দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি নিজেদের সমর্থন ব্যক্ত করে বাংলাদেশকে আমরা নেতৃত্ব দিতে চাই।
এনসিপির সদস্য সচিব বলেন, জামায়াতসহ সমমনা ৮ দলের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করে আমরা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। আমাদের সারা দেশের প্রার্থীরা যেখানে সমঝোতা হয়েছে, সেখানে মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন এবং আমাদের যেখানে প্রার্থী আছে অন্যান্য দলের প্রার্থীরা সেখানে প্রত্যাহার করবেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ৩০০ আসনের প্রার্থী এবং গঠন বিন্যাস স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা হবে।
তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন শুধু সরকার পরিবর্তনের নির্বাচন নয়। এ নির্বাচনে গণভোটের মধ্য দিয়ে সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে নতুন করে গড়ার নির্বাচন। বাংলাদেশের জনগণ যেন সংস্কার ও জুলাই সনদের পক্ষে থেকে গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট প্রদানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে নতুন করে গড়ার যে সুযোগ তৈরি করে।
মনোনয়ন দাখিলকে কেন্দ্র করে সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে আখতার বলেন, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের যে সুন্দর একটা আবহ আমরা দেখতে চাই, তার একটা পরিবেশ এখন পর্যন্ত রংপুরে বিদ্যমান রয়েছে। বিগত সময়ে দেশে হানাহানি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী ও খুনখারাবির ঘটনাগুলো ঘটেছে। এ পর্যন্ত কাউকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে সম্ভবপর হয় নাই।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, শহীদ ওসমান হাদি ভাইকে খুন করা হয়েছে। খুনিরা বাইরে পালিয়ে গেছে অথবা দেশের ভেতরে লুকিয়ে আছে। তাদের এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না এবং সেটার জন্য জনগণের মনে এক ধরনের আশঙ্কা তৈরি করেছে। জনগণের নিরাপত্তা, ভোটাধিকার ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন তাদের সামর্থ্যের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। একটি শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সুষ্ঠু এবং জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তারা উপহার দিবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় তার সঙ্গে এনসিপির রংপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক মো. আল মামুন, মহানগরের সদস্যসচিব আবদুল মালেক, জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর নয়ন, আবু রায়হান, রংপুর-৪ আসনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী আবদুল্লাহ-আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এ আসনে আখতার হোসেনকে সমর্থন দিয়েছেন জামায়াতের প্রার্থী ও মহানগর জামায়াতের আমির এ টি এম আজম খান। কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-৪ আসন। স্বাধীনতার পর থেকে এই আসনে আওয়ামী লীগ ৬ বার, জাতীয় পার্টি ৪ বার এবং বিএনপি ১ বার জয় পেয়েছিল।


