সেনাবাহিনীর অভিযান এবং তাদের ব্যবহারে হতবাক মায়ের ডাকের সংগঠক তুলি ও পরিবারের সদস্যরা

গুম হওয়া পরিবারের সংগঠন মায়ের ডাকের সংগঠক সানজিদা ইসলাম তুলির শাহীনবাগের বাসায় আজ সোমবার বেলা আড়াইটার সেনাবাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালান। এ সময় তার বড় ভাই সাইফুল ইসলাম শ্যামলকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে বিকেল ৫টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। খবর পেয়ে গুমের শিকার অন্যান্য পরিবারের সদস্যরা মায়ের ডাকের কার্যালয় ছুটে আসেন।

এদিকে তুলির বাসা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর একটি দল তুলিদের বাসায় আড়াইটা থেকে দুই ঘণ্টা মতো সময় অবস্থান করে। আরেকটা সিসিটিভি ফুটেছে দেখা যায়, অস্ত্র বহনকারী সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাসার ভেতরে তল্লাশি করছে।

আফরুজা ইসলাম আখি জানান, তাদের জিজ্ঞেস করা হলেও কেন শ্যামলকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেই বিষয়ে বিস্তারিত তারা বলেননি। বাড়ির লোকদের এমনকি শিশুদেরও অস্ত্রের মুখে জিমি করে রাখার অভিযোগ করেন আখি।

পরিবারের সদস্য সানিয়া জানান, একসঙ্গে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন আর্মি সদস্য বাসার ভিতরে ঢুকে সানজিদা ইসলাম তুলি এবং শ্যামলকে খোঁজ করতে থাকেন। তারা প্রতিটি রুমে যান। আর নিচ থেকে তুলির মাকে দোতালায় নিয়ে যান। সানিয়া বলেন, আমরা খুব ভয় পাচ্ছিলাম। দুর্ব্যবহার করছিল। আমাদের সঙ্গে খুবই বাজে ধরনের গালি দিচ্ছিল।

সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, আমার ভাইকে খুঁজতে এসে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। আমার ভাইকে নিয়ে অস্ত্র আছে এমন মর্মে মুচলেকা গ্রহণ করতে চান। আমার ভাই তা প্রত্যাখ্যান করেছে। পরে মেজর নাসের এসে তাকে ফেরত দিয়ে যান। তুলি বলেন, তারা এখনো বুঝতে পারছেন না ঠিক, কেন এবং কীভাবে এই ঘটনাটি ঘটেছে।

তুলি জানান, মাসব্যাপী গুমের ওপরে যে আলোচনা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী হয়েছে আজকে তার সমাপনী ছিল।

তুলির পরিবারের সদস্যরা বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে খুবই আতঙ্কিত। আমরা চাই কেন এবং এটা কারা করেছে তার নিরপেক্ষ তদন্ত হোক এবং তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীকে শনাক্ত করা হোক। আমরা মনে করি এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও সেনাবাহিনীর কাছে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য চাই।

তিনি বলেন, “আমি আমার এক ভাইকে হারিয়েছি। যার জন্য আমাদের পুরো পরিবারটা এখনো ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আর আমরা যে মায়ের ডাক শুরু করেছিলাম এই বাসাটা হচ্ছে তার কেন্দ্র। এখান থেকে যদি এভাবে কাউকে তুলে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে গুম হওয়া এই মানুষগুলোর পরিবারের কাছে কী বার্তা যাবে?”

উল্লেখ্য শ্যামলের ছোট ভাই স্থানীয় বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনসহ আটজনকে ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও শাহীনবাগ থেকে র‌্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সময়ই সুমনের মা হাজেরা খাতুনকে কেন্দ্র করে তার পরিবারের উদ্যোগে গড়ে ওঠে ‘মায়ের ডাক’ নামের সংগঠনটি।

গত প্রায় ১১ বছর ধরে নিখোঁজ স্বজনদের খুঁজে পেতে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন তারা। বলপূর্বক অন্তর্ধান বা গুমের আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে গেছেন সানজিদা। ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন সময় তাদের বাসায় গেছেন, এটি নিয়ে রাজনীতিতে অনেক আলোচনাও হয়েছে।

শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর যে ৫৫ সদস্যের জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে, সানজিদা তুলি সেই কমিটিরও সদস্য।

শাহীনবাগের সেই বাসা থেকে শ্যামলকে ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সেখানে ছুটে যান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, গুম হওয়া পরিবারগুলোর সদস্য, মানবাধিকারকর্মীসহ বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *