সুখবর , জানুয়ারি থেকে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য চালু হচ্ছে উপবৃত্তি

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি বড় অংশজুড়ে রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা। তবে দীর্ঘদিন ধরে তারা চরম বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। শিক্ষা কারিকুলাম, বেতন কাঠামো এবং সরকারি সুবিধা—প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা পিছিয়ে রয়েছে। একসময় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও উপবৃত্তির আওতায় থাকলেও, কোনো কারণ ছাড়াই সেই সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

তবে নতুন বছরে আসছে সুসংবাদ। আগামী বছরের প্রথম দিন থেকেই মাদ্রাসার ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা পুনরায় উপবৃত্তির আওতায় আসছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এ উদ্যোগ মাদ্রাসাগুলোকে ক্রমবর্ধমান শিক্ষার্থী হারানোর সংকট থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করবে।

দীর্ঘদিন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো উপবৃত্তি বরাদ্দ ছিল না। তবে চলতি অর্থবছরে সরকার ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে এবং অর্থ মন্ত্রণালয় থেকেও এ বিষয়ে অনুমোদন মিলেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ৪,৪২৫টি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এই সুবিধা প্রদান করা হবে। আগামী জুলাই থেকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসাসহ সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির আওতায় আসবে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মাদ্রাসা পর্যায়ে উপবৃত্তি চালু হলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও উপস্থিতির হার বৃদ্ধি পাবে এবং ঝরে পড়ার হার কমবে। এছাড়াও, এটি দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করবে। উপবৃত্তি বিতরণে অর্থ বিভাগ জি-টু-পি (গভর্নমেন্ট টু পারসন) পদ্ধতি ব্যবহার করবে এবং অর্থ প্রদান করা হবে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে।

জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা মাসে ৭৫ টাকা এবং প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা মাসিক ১৫০ টাকা উপবৃত্তি পাবে। একটি পরিবারের প্রাথমিক স্তরে সর্বোচ্চ দুইজন শিক্ষার্থী এই উপবৃত্তি পাবে। পরিবারের দুইজনের বেশি শিক্ষার্থী থাকলে অপেক্ষাকৃত জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী এই সুবিধার জন্য প্রাধান্য পাবে। উপবৃত্তির অর্থ সাধারণত মা-কে দেওয়া হবে। তবে মায়ের অনুপস্থিতিতে বাবা বা বৈধ অভিভাবকের একাউন্টে এই অর্থ প্রদান করা হবে।

বর্তমানে দেশে সংযুক্ত এমপিওভুক্ত ইবতেদায়ি মাদ্রাসার সংখ্যা ৮,২২৯টি, এমপিওবিহীন ১,০৩৬টি এবং অনুদানভুক্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা রয়েছে ১,৫১৯টি। অনুদানের বাইরে থাকা মাদ্রাসার সংখ্যা ২,৩২০টি। প্রথম পর্যায়ে (জানুয়ারি-জুন) ৪ লাখ ৪১ হাজার ৬২০ জন শিক্ষার্থী এই উপবৃত্তির আওতায় আসবে। পরবর্তী জুলাই মাস থেকে বাকি শিক্ষার্থীদের জন্যও এই সুবিধা কার্যকর হবে।

মাদ্রাসা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অর্থ) আবুল বাসার বলেন, “মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা অনেকদিন ধরেই বৈষম্যের শিকার হচ্ছিল। স্কুলের শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পেলেও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা তা থেকে বঞ্চিত ছিল। এই উদ্যোগের মাধ্যমে সেই বৈষম্যের অবসান হবে।”

উপবৃত্তির জন্য শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করতে হবে। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাসিক পাঠ্য দিনের ৮০ শতাংশ উপস্থিত থাকতে হবে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও একই উপস্থিতির শর্ত প্রযোজ্য, তবে তাদের পরীক্ষার ফলাফলও সন্তোষজনক হতে হবে। অনুপস্থিতির ক্ষেত্রে শিক্ষকদের যুক্তিসঙ্গত কারণ উল্লেখ করতে হবে।

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য শর্ত শিথিল করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মাদ্রাসায় উপস্থিতি সম্ভব না হলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার অনুমোদনক্রমে উপবৃত্তি প্রদান করা যাবে।

উপবৃত্তি প্রদানের জন্য ইতোমধ্যে সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। মাদ্রাসা অধিদপ্তর এটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে।

আগামী বছর থেকে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরাও উপবৃত্তির আওতায় আসবে, যা মাদ্রাসা শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *