নেতা সংগ্রহে মাঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে শিগগির নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে- ইটা এখন এক প্রকার নিশ্চিত। বিভিন্ন সূত্রের খবর ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন এ দলটি আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে। অভ্যুত্থানের এক মাস পর সেপ্টেম্বরে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার কথা বলে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। প্রায় চার মাস ধরে সারা দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় কমিটি গঠন করে সংগঠনের বিস্তৃতিও ঘটিয়েছে তারা। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তৃণমূলে সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি হলে দলও দাঁড়িয়ে যাবে। গত কয়েকদিন থেকে জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে দল গঠনের সর্বশেষ প্রস্তুতি সম্পর্কে জানান দেওয়া হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্যতা মাথায় রেখে দ্রুত দল গঠনের প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় নেপথ্যের কারিগররা।

দলটির নেতাদেড় সাথে কথা বলে জানা গেছে, শুরুতে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে পরবর্তীতে কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। ইতিমধ্যে সেই লক্ষ্যে কাজও শুরু করেছে সংগঠনটি। দল ঘোষণাকে সামনে রেখে পর্যায়ক্রমে পদত্যাগ করবেন সরকারে থাকা ছাত্রদের তিন প্রতিনিধি। যাদের একজন নতুন দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিতে পারেন। জানা গেছে, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন সরকারের আইসিটি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে থাকা নাহিদ ইসলাম। যিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নম্বর সমন্বয়ক ছিলেন। শোনা যাচ্ছে, নাহিদকে সামনে রেখে দল ঘোষণা হতে পারে। নাহিদের পর উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করবেন আরেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। যিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। নাহিদের পদত্যাগের পরের ধাপে আসিফ পদত্যাগ করতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে। আরেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে অথবা অক্টোবরের শেষে পদত্যাগ করতে পারেন। তবে পদত্যাগ ইস্যুতে গতকাল নাহিদ ইসলাম বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। যদি হয় তাহলে আমরা নিজেরাই বলবো। রাজনৈতিক দলে অংশগ্রহণের পরিস্থিতি হলে, আমরা সরকার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলে সেটা আনুষ্ঠানিকভাবেই বলবো।

নতুন দল ঘোষণার আগে ছাত্ররা যোগাযোগ রক্ষা করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেও। উদ্দেশ্য- তাদেরকে নতুন দলে ভেড়ানো। এ ছাড়াও বিভিন্ন দলের নেতারা নিজ থেকেও যোগাযোগ করছেন ছাত্রদের সঙ্গে। ছাত্রদের যোগাযোগ হচ্ছে সুশীল সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গেও। বিভিন্ন সূত্রের খবর, নিজেদের নতুন দলে পরিচিত একজন রাজনৈতিক মুখকে নিয়ে আসতে চাচ্ছেন ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। সে লক্ষ্যে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে। এ তালিকায় রয়েছে বিএনপিসহ অন্যান্য ছোট দলের নেতারা। যেখানে বিএনপি’র হয়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন এমন ব্যক্তিও রয়েছেন। এ ছাড়াও দলটির তরুণ কয়েকজন নেতাকে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা চলমান রয়েছে। বিএনপি ছাড়াও দলটির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা কয়েকটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে নতুন দলে যোগ দেয়ার। এ ছাড়াও বিএনপি’র সঙ্গে জোটে থেকে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করা ব্যক্তিও রয়েছেন এ তালিকায়। তবে এদের কেউই দলে যোগদানের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানাননি। কেউ কেউ নিজেদের অনাগ্রহের কথা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন আবার সিদ্ধান্ত নিতে সময় নিচ্ছেন বেশ কয়েকজন। এ ছাড়াও সুশীল সমাজের কয়েকজন ব্যক্তিকে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন ছাত্ররা।

এদিকে ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদের একাধিক ব্যক্তির একটি গোপন বৈঠক নিয়ে আলোচনা রয়েছে নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভ্যন্তরে। সূত্রের দাবি, জানুয়ারির মাঝামাঝিতে ঢাকার পার্শ্ববর্তী একটি রিসোর্টে এ বৈঠক হয়। যেখানে সাত ছাত্রনেতা ছাড়াও উপদেষ্টা পরিষদের একাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। তবে এ ধরনের কোনো বৈঠকের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা কিছু প্রকাশ করেননি।

জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, “আমরা দল গঠনের আগে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গেই যোগাযোগ করছি। সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোও রয়েছে। বিষয়টা এমন না যে তাদেরকে দলে ভেড়াতে এ উদ্যোগ। । এখানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতারাই নেতৃত্বে থাকবে। “

এবিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণার প্রস্তুতির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কথাবার্তা হচ্ছে। আমরা দল ঘোষণা জাঁকজমকপূর্ণভাবে করতে চাই। সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *