গণপরিষদ ও সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে চায় এনসিপি

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি (NCP)) দেশের শাসনব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তনের লক্ষ্যে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ (দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র) প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (Nahid Islam) মঙ্গলবার এ বিষয়ে বক্তব্য দেন।

একসঙ্গে হতে পারে সংসদ ও গণপরিষদ নির্বাচন

নাহিদ ইসলাম বলেছেন, গণপরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে আয়োজন করা সম্ভব। এর মাধ্যমে নতুন শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি প্রকৃত গণতন্ত্র নিশ্চিত করা যাবে। তাঁর মতে, গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধন ও নতুন কাঠামো তৈরির পথ সুগম হবে।

জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও রায়েরবাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন

মঙ্গলবার সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে (National Martyrs’ Memorial) মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা। পরে তারা ঢাকার রায়েরবাজার কবরস্থানে (Rayerbazar Graveyard) জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ছাত্র-জনতার কবর জিয়ারত করেন।

পুরোনো শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের দাবি

গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে নাহিদ ইসলাম বলেন, পুরোনো সংবিধান ও শাসনব্যবস্থা রেখে নতুন বাংলাদেশ গঠন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “শুধু সরকার পরিবর্তন করলেই জনগণের কল্যাণ ও প্রকৃত গণতন্ত্র নিশ্চিত হবে না। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে কেবল সরকার পরিবর্তনের জন্য নয়, বরং নতুন সাংবিধানিক কাঠামো গড়ে তোলার জন্য। আমাদের লক্ষ্য এমন একটি বাংলাদেশ গঠন করা, যেখানে প্রকৃত গণতন্ত্র, ইনসাফ ও সাম্য নিশ্চিত হবে।”

তিনি আরও বলেন, “১৯৪৭ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সকল গণআন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতেই এনসিপি কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করলেও, বারবার আমাদের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো বারবার ভেঙে পড়েছে, আর সংবিধানে একদলীয় শাসনের বীজ রোপণ করা হয়েছে।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে বিচার দাবি

রায়েরবাজারে শহীদদের কবর জিয়ারতের পর নাহিদ ইসলাম বলেন, গণপরিষদ নির্বাচনই প্রকৃত গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথ। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জুলাই অভ্যুত্থান এবং গত ১৫ বছরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবি জানান।

তিনি বলেন, “বিচারের পর সাংবিধানিক সংস্কার করে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দ্রুত সংলাপ আয়োজন করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন করা।”

দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু

গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশের পর মঙ্গলবারের শ্রদ্ধা নিবেদন ও কবর জিয়ারতের মাধ্যমে এনসিপি তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করল। দলীয় প্রধান নাহিদ ইসলাম জানান, তাদের প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে সাংগঠনিকভাবে দলকে বিস্তৃত করা এবং নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা।

তিনি বলেন, “দলের নিবন্ধন পেতে যেসব শর্ত পূরণ করতে হবে, সেগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। একই সঙ্গে এ মাসের মধ্যেই দলের গঠনতন্ত্র প্রণয়নের কাজ শুরু করা হবে।”

সরকারের কঠোর সমালোচনা

এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, “যত দিন না পর্যন্ত ‘খুনি হাসিনাকে’ ফাঁসির মঞ্চে দেখছি, তত দিন যেন কেউ ভুলক্রমেও নির্বাচনের কথা না বলে।”

মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, “সরকার ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর ক্ষমতায় এসেছে। তাদের মনে রাখা উচিত, যদি বিচার নিশ্চিত করা না হয়, তাহলে পুরো প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। প্রয়োজনে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে।”

এ সময় এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *