ঢাবিতে ছাত্রী হেনস্তা: মব উসকে দেওয়ায় গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের মাজহারুলের পদ স্থগিত

ভুল তথ্য ছড়িয়ে জনসাধারণকে উসকে দেওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের (Bangladesh Democratic Student Council) কেন্দ্রীয় সংগঠক কাজী মাজহারুল ইসলাম (Kazi Mazharul Islam)-এর সদস্যপদ স্থগিত করেছে সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বিকেলে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সদস্যসচিব জাহিদ আহসান (Jahid Ahsan) স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

সংগঠনের সিদ্ধান্ত ও কারণ

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “ভুল তথ্য ছড়িয়ে মব উসকে অরাজক পরিস্থিতি তৈরির জন্য কাজী মাজহারুল ইসলামের সদস্যপদ স্থগিত করা হলো। তাকে কেন স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না— এ বিষয়ে এক কার্যদিবসের মধ্যে আহ্বায়কের কাছে ব্যাখ্যা দিতে হবে।”

এছাড়া গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির এক জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী হেনস্তা ও বিতর্কিত প্রচারণা

বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী শাহবাগ থেকে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে এক ব্যক্তির দ্বারা হেনস্তার শিকার হন বলে অভিযোগ করেন। এ ঘটনার সঙ্গে অভিযুক্ত হিসেবে নাম আসে মোস্তফা আসিফ অর্ণব (Mostafa Asif Arnob)-এর।

কিন্তু ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাজী মাজহারুল ইসলাম (Kazi Mazharul Islam) অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নির্দোষ দাবি করে প্রচারণা চালান এবং তার মুক্তির দাবি তোলেন। এর জেরে বুধবার মধ্যরাতের পর শাহবাগ থানায় একদল ব্যক্তি জড়ো হয়, যারা নিজেদের ‘তৌহিদী জনতা’ বলে পরিচয় দেয়। তারা ঘোষণা দেয় যে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত তারা শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান করবে।

এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয় এবং অনেকেই কাজী মাজহারুল ইসলামের ভূমিকার নিন্দা জানান।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদক্ষেপ

এই ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলাম (Rafiqul Islam)-কে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত মোস্তফা আসিফ অর্ণব (Mostafa Asif Arnob)-কে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে তার বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে বলে জানানো হয়েছে।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগ

ভুক্তভোগী ছাত্রী তার ফেসবুক পোস্টে লেখেন,

“এই লোকটা আজকে আমাকে শাহবাগ থেকে আসার পথে হ্যারাস করেছে। সে আমাকে হুট করে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে বলল, আমার ড্রেস ঠিক নেই, আমি পর্দা করিনি, ইত্যাদি ইত্যাদি এবং তার আচরণ খুবই আক্রমণাত্মক ছিল।”

তিনি আরও জানান,

“পরবর্তীতে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি, আপনি কোন হলে থাকেন, কোন ডিপার্টমেন্টে পড়েন? সে বলে, সে এই ক্যাম্পাসের কেউ না। আমি সালওয়ার-কামিজ পরে ছিলাম, ওড়নাও ঠিক মতো পরা ছিল। সে আমাকে বলে, আমার নাকি ওড়না সরে গেছে। এরপর আমি তাকে বললাম, এটা তো আপনার দেখার বিষয় না। তখন আমি প্রক্টরকে কল দিতে চাইলে সে দৌঁড় দিয়ে পালিয়ে যায়।”

এই পোস্টটি দ্রুত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায় এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ওঠে।


Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *