এনসিপি: সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ১১৩টিতে সম্পূর্ণ, ২৯টিতে আংশিক একমত

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি (NCP)) ছয়টি বিষয়ে গঠিত সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ওপর তাদের মতামত জমা দিয়েছে। একইসঙ্গে, ঐকমত্য কমিশনের কাছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে দলটি।

রবিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ (Ali Riaz )-এর কাছে লিখিত মতামত হস্তান্তর করে এনসিপি। কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে ১১৩টির পক্ষে মত দিয়েছে দলটি, ২৯টি প্রস্তাবে আংশিকভাবে একমত হয়েছে এবং ২২টি প্রস্তাবের বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছে।

এছাড়া, পুলিশ সংস্কার কমিশন ও স্থানীয় সরকার কমিশনের সুপারিশ কেন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়নি, সে বিষয়েও ব্যাখ্যা চেয়েছে এনসিপি।

দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রশ্নে অবস্থান

এনসিপি দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদের পক্ষে মত দিয়েছে। তবে দলটি দাবি করেছে, নির্বাচনের আগেই উচ্চকক্ষের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা আবশ্যক।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে দলটি বলেছে, নির্বাচনকালীন সরকার হতে হবে অন্তর্বর্তী সরকার, যার মেয়াদ ৭০ থেকে ৭৫ দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত।

সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও মৌলিক অধিকার প্রসঙ্গে মতামত

সংবিধানে জাতিসত্তাগুলোর সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকা উচিত বলে মত দিয়েছে এনসিপি। দলটি বলেছে, মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার বিষয়ে আরও সুস্পষ্ট সংজ্ঞা প্রয়োজন এবং এতে ‘প্রাণ ও প্রকৃতি সুরক্ষা’-কে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।

এছাড়া, মৌলিক অধিকারের সীমা নির্ধারণের এখতিয়ার সর্বোচ্চ আদালতের কাছে থাকা উচিত বলেও মতামত দিয়েছে দলটি।

যুব প্রতিনিধিত্ব ও সংসদীয় সংস্কার

এনসিপি প্রস্তাব দিয়েছে, নির্বাচনে প্রতিটি দলকে ১০% তরুণ-তরুণী মনোনয়ন দিতে হবে, যেখানে সর্বোচ্চ বয়সসীমা হবে ৩৫ বছর এবং ন্যূনতম বয়স ২৩ বছর।

ডেপুটি স্পিকার বিরোধী দল থেকে হওয়া উচিত বলে মত দিয়েছে এনসিপি। তারা বলেছে, সংসদ সদস্যরা অর্থবিল ও দলীয় অনাস্থা ভোট ছাড়া স্বাধীন মতামত প্রকাশ করতে পারবেন।

এছাড়া, দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব একই ব্যক্তির না হওয়া উচিত বলেও মত প্রকাশ করেছে এনসিপি।

সংবিধান ও নির্বাচন সম্পর্কিত সুপারিশ

এনসিপি জানিয়েছে, উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের পার্লামেন্ট ব্যবস্থায় উচ্চকক্ষের প্রার্থী নির্বাচনের আগেই ঘোষিত হওয়া উচিত। দলটির মতে, ভোটারদের জানা দরকার, তাদের ভোটের মাধ্যমে উচ্চকক্ষে কারা প্রতিনিধিত্ব করবে।

রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন, তবে সেটি বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত নয় বলেও মত দিয়েছে এনসিপি।

এছাড়া, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব হবে শুধুমাত্র নির্বাচন পরিচালনা করা। এনসিপি প্রস্তাব করেছে, নির্বাচনকালীন সরকারের মেয়াদ ৭০ থেকে ৭৫ দিন হওয়া উচিত।

বিচার বিভাগ ও প্রশাসনিক সংস্কার

এনসিপি বলেছে, বিচার বিভাগের স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সংসদ চলাকালীন জরুরি অবস্থা জারি করতে হলে উভয় কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামত প্রয়োজন হবে।

এনসিপি জানিয়েছে, দুদক কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা যথেষ্ট। এছাড়া, বিচারক ও আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের বিবরণী প্রতি তিন বছর অন্তর নয়, বরং প্রতি বছর দেওয়ার প্রস্তাব করেছে দলটি।

প্রশাসনিক সংস্কারের বিষয়ে এনসিপি বলেছে, বিচার বিভাগের ক্ষমতা শুধুমাত্র বিচার বিভাগের পেশাজীবীদের হাতে থাকা উচিত এবং এটি অন্য কারো হাতে থাকা উচিত নয়।

এছাড়া, দলটি প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থাকে বিপজ্জনক বলে আখ্যায়িত করেছে এবং এটি বাতিল করার সুপারিশ করেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *