শিল্প ও ব্যবসার সংকটে নেতারা
দেশের অন্যতম শিল্প শহর নারায়ণগঞ্জ (Narayanganj)-এর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘদিন ধরে থাকা ওসমান পরিবার (Osman Family)-এর সদস্যরা এখন বিদেশে অবস্থান করছেন এবং সেখান থেকেই নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে নতুন অংশীদার খুঁজছেন। পরিবারটির প্রভাবশালী দুই সদস্য শামীম ওসমান (Shamim Osman) ও সেলিম ওসমান (Selim Osman)-এর রয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ। গার্মেন্টস, শিপিং, আবাসনসহ বিভিন্ন খাতে রয়েছে তাদের বিনিয়োগ।
তারা দেশের শীর্ষস্থানীয় এক শিল্প গ্রুপে আগে থেকেই বেনামি অংশীদার ছিলেন, তবে রাজনৈতিক পালাবদলের পর সেই অংশীদারিত্ব আরও বেড়েছে। নতুন করে অংশীদার হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এক সদস্য, যিনি গুলশানের বাড়িতে শামীম ওসমানকে ভাড়া দিয়েছিলেন এবং বর্তমানে তার সম্পত্তি দেখাশোনা করছেন।
গোলাম দস্তগীর গাজীর ব্যবসার পতন
আওয়ামী লীগের আরেক প্রভাবশালী নেতা গোলাম দস্তগীর গাজী (Golam Dastagir Gazi) বর্তমানে কারাগারে। তার মালিকানাধীন গাজী টায়ারসহ একাধিক কারখানা আগুনে পুড়ে গেছে বা বন্ধ হয়ে রয়েছে। পরিবার সূত্র জানায়, ব্যবসা সচল রাখতে তারা অংশীদার খুঁজছেন, তবে স্থানীয় বিএনপি গ্রুপের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে সমস্যায় পড়েছেন।
আবু জাফর শফিউদ্দিনের বিদেশে থাকা ও শেয়ার হস্তান্তর
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৮ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী আবু জাফর মো. শফিউদ্দিন শামীম (Abu Zafar Md. Shafiuddin Shamim) বিদেশে পালিয়ে গেছেন এবং এখন নতুন অংশীদার খুঁজছেন। এসবিএসি ব্যাংকে থাকা একটি শেয়ার ইতিমধ্যে বিএনপিপন্থী এক ব্যবসায়ীর নামে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
রাশিয়ায় শাহরিয়ার আলমের ব্যবসা
সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম (Shahriar Alam) বর্তমানে রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। তার মালিকানাধীন রেনেসাঁ গ্রুপের প্রায় সব ব্যবসা সংকটে। ব্যাংক ঋণ খেলাপি হওয়ার পথে এবং ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তিনি রাজশাহীর বিএনপি নেতাদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের আলোচনা করছেন।
দলীয় ব্যবসায়ী নেতাদের দুঃসময়
গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দলের বহু নেতা ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। নির্বাচনী হলফনামা অনুযায়ী, অনেকেই শত কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়:
- সালমান এফ রহমান (Salman F Rahman): বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান, বর্তমানে কারাবন্দি।
- সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ (Saifuzzaman Chowdhury Javed): যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত সাবেক ভূমিমন্ত্রী, যার মালিকানায় বিদেশে রয়েছে প্রায় ৪৮২টি সম্পত্তি।
- হাছান মাহমুদ (Hasan Mahmud): সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যার স্ত্রী ও ভাইয়ের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে।
- মাহবুব-উল আলম হানিফ (Mahbub-ul-Alam Hanif): কোয়েস্ট গ্রুপের মালিক, বর্তমানে পলাতক।
- আ হ ম মুস্তফা কামাল (AHM Mustafa Kamal): সাবেক অর্থমন্ত্রী, যিনি বিদেশে থেকেই ব্যবসা বাঁচাতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বর্তমান সংকট এবং ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা
আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (Khalid Mahmud Chowdhury) জানান, বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় অনেক নেতারই ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ২৬৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ১৭০ জনই ছিলেন ব্যবসায়ী, যা মোট প্রার্থীর ৬৪.১৫ শতাংশ। দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় সব বড় ব্যবসায়ীর ব্যবসা এখন হুমকির মুখে।
সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্রে বিপুর অর্থ পাচার
নসরুল হামিদ বিপু (Nasrul Hamid Bipu), সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন বলছে, ফ্লোরিডার ঠিকানা ব্যবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোম্পানি খুলে বিপু হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। বর্তমানে তিনি সম্পদ বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং অংশীদার খুঁজছেন।
সার্বিক পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, পলাতক আওয়ামী লীগ নেতারা বিদেশে থেকেও তাদের বিশাল ব্যবসা সাম্রাজ্য রক্ষা করতে মরিয়া। অনেকে বিএনপিপন্থী ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও জোট বেঁধে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।