গুলশানে চাঁদাবাজির সময় ধরা পড়া রাজ্জাক পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য, বিস্ফোরক দাবি মাহিন সরকারের

রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে আটক হওয়া আবদুর রাজ্জাক বিন সুলাইমান সম্পর্কে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন মাহিন সরকার (Mahin Sarkar)। তিনি দাবি করেছেন, রাজ্জাক কোনো সাধারণ ব্যক্তি নন, বরং তিনি পুলিশ সংস্কার কমিশন (Police Reform Commission)-এর সদস্য—এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন, যা সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (Ministry of Home Affairs)-এর অন্তর্ভুক্ত।

রোববার (২৭ জুলাই) সকালে নিজের ফেসবুক পোস্টে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকার এই তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, “যে ছেলেটা গুলশানে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে, সে হচ্ছে পুলিশ সংস্কার কমিশনের মেম্বার। মানে গুরুত্বের বিচারে সবচেয়ে স্পর্শকাতর একটি জায়গায় সে ছিল।”

মাহিন আরও অভিযোগ করেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এমন পরিচয় দিয়েই অনেকে অর্থ উপার্জন করে। রাজ্জাক কীভাবে এমন একটি জায়গায় সুপারিশ পেল, সেটি অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত।”

‘চাঁদাবাজ চক্রে’ জড়িত আরও পরিচিত নাম

পোস্টে মাহিন সরকারের দাবি অনুযায়ী, শুধু আবদুর রাজ্জাকই নয়, এই চাঁদাবাজ চক্রে আরও কিছু পরিচিত মুখ জড়িত। এর মধ্যে অন্যতম হলেন জানে আলম অপু (Jane Alam Apu), যিনি গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং পূর্বে থেকেই ‘দুর্নীতিবিরোধী’ ভাবমূর্তি তৈরি করেছিলেন। কিন্তু মাহিনের মতে, তার অতীতেও বহু অভিযোগ রয়েছে, বিশেষ করে জয়পুরহাটে।

তিনি লেখেন, “অপু অনেকটা ঔদ্ধত্যের সঙ্গে দুর্নীতিবিরোধী কথাবার্তা বলত, অথচ তার বিরুদ্ধে নিজ জেলা জয়পুরহাটে অনেক অভিযোগ কানে এসেছে।”

অন্যদিকে, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নাম উঠে এসেছে ইব্রাহিম হোসেন মুন্নার, যিনি ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারের অধীনে কাজ করতেন। মাহিনের মতে, মুন্নাই ছিল এই চাঁদাবাজির অন্যতম অগ্রণী মুখ। তিনি আরও জানান, এই আন্দোলনের ঢাকা মহানগর কমিটি গঠনে মুন্নার ভূমিকা ছিল এবং সর্বশেষ নির্বাচনে অংশ নিয়েও দায়িত্ব না নেওয়ার অজুহাতে সরে যান।

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন

মাহিন বলেন, “এই ব্যানারের যৌক্তিকতা এখন শতভাগ ফুরিয়ে এসেছে। আমি নিজেও একসময় এই ব্যানার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছিলাম, কিন্তু এখন মনে করি, এটি আর প্রয়োজনীয় নয়।”

তিনি দাবি করেন, এই অভিযুক্তরা রাজনৈতিকভাবে ‘সেন্ট্রালি কানেক্টেড’ এবং বিভিন্ন জায়গায় তাদের প্রভাব রয়েছে। “তাদের রিমান্ডে নিয়ে প্রকৃত কুশীলবদের খুঁজে বের করাটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ,”—বলেছেন মাহিন।

ঘটনার পেছনের মূল প্রেক্ষাপট

প্রসঙ্গত, গত শনিবার গুলশানে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদ (Shammi Ahmed)-এর বাসায় গিয়ে চাঁদা দাবি করার অভিযোগে পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের মধ্যে তিনজনকে ‘সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের’ অভিযোগে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয় সংশ্লিষ্ট সংগঠন থেকে।

এই ঘটনা সামনে আসার পর, মাহিন সরকারের মন্তব্যে আরও একবার আলোচনায় উঠে এল ছাত্র রাজনীতি, প্রভাবশালী ব্যানার ও সংগঠনের নামে সুবিধা আদায়ের প্রবণতা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *