ইউনূস-মোদি বৈঠকের পর আওয়ামী শিবিরে গভীর হতাশা

নাটকীয়ভাবে অনুষ্ঠিত বৈঠক

প্রফেসর ইউনূস (Professor Yunus) ও নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) মধ্যে বৈঠক শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হওয়ায় চরম হতাশা বিরাজ করছে আওয়ামী লীগ (Awami League) শিবিরে। যদিও শুরুতে জানানো হয়েছিল এমন কোনো বৈঠকের সম্ভাবনা নেই, শেষ মুহূর্তে নাটকীয়ভাবে এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। প্রাথমিকভাবে ২০ মিনিটের নির্ধারিত সময় থাকলেও, বৈঠকটি ৪০ মিনিট পর্যন্ত গড়ায়। বৈঠকে বড় ধরনের কোনো চমকপ্রদ সিদ্ধান্ত আসেনি, তবে এটি ছিল আলোচিত ও রহস্যঘেরা।

ভারতীয় মিডিয়ার পূর্বাভাস ও মোদির নিরবতা

বৈঠকের আগেই ভারতের গণমাধ্যমগুলো জানিয়ে দেয়, মোদি-ইউনূস বৈঠক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এমনকি নরেন্দ্র মোদির নিজের টুইটার পোস্টেও এ নিয়ে কোনো ইঙ্গিত ছিল না। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, বৈঠকটি হচ্ছে না।

চীন সফর ও সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ইউনূসের বক্তব্য

ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফর এবং ‘সেভেন সিস্টার্স’ নিয়ে দেওয়া খোলামেলা বক্তব্য নতুন কূটনৈতিক উত্তেজনার জন্ম দেয়। ভারত প্রকাশ্যে হতাশা জানায়। এসব পরিস্থিতি বৈঠককে অনিশ্চয়তায় ফেলে দেয়।

তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতায় ‘সোফা বৈঠক’

সূত্র বলছে, একটি অজ্ঞাত তৃতীয় পক্ষের উদ্যোগে এই ‘সোফা বৈঠক’ অনুষ্ঠিত হয়। যদিও ওই পক্ষটি কে বা কারা—তা এখনো স্পষ্ট নয়। ঢাকার কূটনৈতিক মহলে এ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।

ভারতীয় অবস্থানের পরিবর্তন ও বার্তা

ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন (Indian High Commission) তাদের বার্তায় জানায়, বাংলাদেশের মানুষ ভারতের প্রতি বিরূপ হয়ে উঠছে—এই ধারা চলতে থাকলে, পাকিস্তানের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এই অবস্থান থেকেই ভারত এখন বলছে, তারা কেবল একটি দলের নয়, জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায়।

শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গ উঠিয়ে দেন ইউনূস

কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, ভারত ধারণাও করেনি যে ইউনূস সরাসরি মোদির সামনে বসে শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) প্রত্যর্পণের দাবি তুলবেন। ভারতের ধারণা ছিল, কূটনৈতিক চিঠিই যথেষ্ট। কিন্তু ইউনূস সেই সীমা অতিক্রম করেন।

পালিয়ে থাকা আওয়ামী নেতারা ও সহিংসতা

বর্তমানে হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ভারতে অবস্থান করছেন। কেউ কেউ রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন, আবার অনেকে ‘ম্যানেজ’ করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। একইসঙ্গে দেশে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগসহ নানারকম সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।

সংখ্যালঘু নির্যাতন ও ভারতীয় মিডিয়ার ভূমিকা

বৈঠকে সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং ভারতীয় মিডিয়ায় বাংলাদেশের নেতিবাচক প্রচার নিয়েও আলোচনা হয়। বাংলাদেশ পক্ষ থেকে জানানো হয়, এইসব অভিযোগ অনেকাংশে প্রোপাগান্ডা। তবে ভারত তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি বা তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি।

নির্বাচনী ইস্যু ও আন্তর্জাতিক চাপ

বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ ইস্যু। তবে কূটনৈতিকরা বলছেন, এ ব্যাপারে দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা নেই। তবে ভারতের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়বে। ভারতও দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের সমাধান দিতে পারে।

আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি

নিউ ইয়র্ক টাইমস (New York Times) বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও তা এক কথায় নাকচ করে দেওয়া হয়। তবুও বিশ্লেষকরা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *