এডিবির পূর্বাভাসে দুঃসংবাদ : বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমবে, মূল্যস্ফীতি পৌঁছাবে দ্বিগুণ অঙ্কে

এডিও প্রতিবেদনে উদ্বেগ

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে আগাম দুঃসংবাদ দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (Asian Development Bank)। সংস্থাটির ‘এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) এপ্রিল ২০২৫’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার কমে ৩ দশমিক ৯ শতাংশে নামবে।

গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধি হার কমবে দশমিক ৩ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে এই হার ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে আশার খবর হলো, আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৫ দশমিক ১ শতাংশে উঠতে পারে।

মূল্যস্ফীতির আশঙ্কাজনক উল্লম্ফন

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মূল্যস্ফীতি ফের বেড়ে দ্বিগুণ অঙ্কে পৌঁছাতে পারে। গত অর্থবছরে এটি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরে বেড়ে ১০ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে।

মূল্যস্ফীতির এই উল্লম্ফনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বাজার ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, পাইকারি বাজারে প্রতিযোগিতার অভাব, তথ্যের ঘাটতি এবং সরবরাহ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা।

রাজনৈতিক ও প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জে প্রবৃদ্ধি শ্লথ

হো ইউন জেয়ং (Ho Yun Jung), বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর, প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি বাড়লেও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, শিল্পখাতে অস্থিরতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদাও দুর্বল হয়ে পড়েছে।

বিবিএসের ভিন্ন চিত্র

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (Bangladesh Bureau of Statistics) মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানায়, দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, যেখানে আগের প্রান্তিকে তা ছিল মাত্র ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে সম্ভাবনা, তবে শুল্কে শঙ্কা

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে ভোগ ও বিনিয়োগ কিছুটা বাড়তে পারে। তবে সংকোচনমূলক আর্থিক ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্কতা বেসরকারি খাতের গতি সীমিত রাখবে। এডিবি শঙ্কা প্রকাশ করেছে, মার্কিন বাজারে নতুন শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত ও প্রবৃদ্ধি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।

সেবা ও কৃষি খাতে মন্থরতা, শিল্প খাতে সামান্য অগ্রগতি

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, আর্থিক খাতের ঝুঁকি এবং ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসের কারণে সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি মন্থর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বারবার বন্যার কারণে কৃষি খাতেও প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেতে পারে। তবে রপ্তানি সহায়তায় শিল্প খাতে সামান্য প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

বৈদেশিক মুদ্রা খাতে স্বস্তির বার্তা

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বাণিজ্য ঘাটতি কমে যাওয়ায় এবং রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবের ঘাটতি জিডিপির ১ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে কমে ০ দশমিক ৯ শতাংশে নামতে পারে।

কাঠামোগত সংস্কারের সুপারিশ

হো ইউন জেয়ং বলেন, “বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি সহনশীল। এই সহনশীলতা কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব।” তিনি টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য তৈরি পোশাকনির্ভরতা কমিয়ে বহুমুখীকরণ, বেসরকারি খাত উন্নয়ন, অবকাঠামো নির্মাণ, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, আর্থিক খাতের সুশাসন এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

দক্ষিণ এশিয়ায় তুলনামূলক চিত্র

প্রতিবেদনে ভারতের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ থেকে ৬ দশমিক ৭ শতাংশে এবং পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি আগের মতোই ২ দশমিক ৫ শতাংশে থাকার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *