রিজার্ভ চুরি: বাংলাদেশ ব্যাংকের জড়িত কর্মকর্তারা অবশেষে শাস্তির মুখে

দায়ীদের বাঁচাতে নির্দেশ ছিল: আইন উপদেষ্টার বিস্ফোরক দাবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবশেষে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। রোববার (১৩ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল (Asif Nazrul), যিনি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্বে আছেন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে তদন্তে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও এখন বিষয়টি নতুন করে পর্যালোচনা করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রিজার্ভ চুরি পর্যালোচনায় গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির বৈঠক শেষে আসিফ নজরুল বলেন, “সিআইডি যখন তদন্তের ম্যাচিউর পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন তাদের নির্দিষ্টভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয় যেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ইনভলভড কর্মকর্তাদের নাম অভিযোগপত্রে না আসে। এই ধরনের নির্দেশ যে দেওয়া হয়েছিল, তা সিআইডির কাছ থেকেই আজ জেনেছি।”

তিনি আরও জানান, “যারা প্রকৃতপক্ষে এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিচারের আওতায় আনতে করণীয় নির্ধারণে কাজ চলছে।”

ফরাসউদ্দিন রিপোর্টে উঠে এসেছে দায়িত্বশীলদের নাম

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফরাসউদ্দিন কমিটি যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, সেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। সেই নামগুলো নিয়ে এখন উপদেষ্টা পর্যায়ে প্রশ্ন উঠেছে—এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এতদিনে বাংলাদেশ ব্যাংক কী ব্যবস্থা নিয়েছে?

এই বিষয়ে আইন উপদেষ্টারা খোলামেলা জবাব চেয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। নাম থাকা সত্ত্বেও দায়িত্বে বহাল থাকা বা কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হলে সেটিকে চরম গাফিলতি বলেই মনে করা হচ্ছে।

গণঅভ্যুত্থানে আহতদের বিদেশে চিকিৎসার উদ্যোগ

অপর একটি প্রসঙ্গে, রিজার্ভ চুরি সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনের একই পর্বে কথা বলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম (Nurjahan Begum)। তিনি জানান, জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে আহত ৪৩ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে, যার মধ্যে ২৬ জন ব্যাংকক ও ১৬ জন দিল্লিতে চিকিৎসাধীন।

বর্তমানে আরও ৫২ জনকে বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে, যার মধ্যে ৩১ জনকে পাঠানো হবে পাকিস্তানে। নূরজাহান বেগম বলেন, “আহতদের চিকিৎসা নিয়ে শুরুতে নানা প্রতিবন্ধকতা থাকলেও আমরা তা কাটিয়ে উঠেছি। এখন পর্যন্ত ৮৬৪ জন শহীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে এবং আহতের সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি।”

তিনি আরও জানান, হতাহতদের নিয়ে তথ্য যাচাই-বাছাই এখনো চলছে এবং চূড়ান্ত সংখ্যা কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে।

রিজার্ভ চুরি ও গণঅভ্যুত্থান—দুই বড় জাতীয় ইস্যুতে সরকারের এই উচ্চ পর্যায়ের সক্রিয়তা নতুন করে রাজনৈতিক ও জনমানসে আলোচনার জন্ম দিচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে দায়ীদের এতদিন গোপনে রক্ষা করার অভিযোগ এখন সরাসরি প্রকাশ্যে এলে, এর রাজনৈতিক প্রভাবও হতে পারে ব্যাপক।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *