বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ (Awami League)–এর অভ্যন্তরে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম আনন্দবাজার (Anandabazar)–এর এক প্রতিবেদন থেকে। তাদের দাবি, ভবিষ্যতে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নাও থাকতে পারেন এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে একটি ‘নব্য আওয়ামী লীগ’ গঠনের পরিকল্পনা এখন অনেকটাই এগিয়ে গেছে। তবে দলের বর্তমান নেতৃত্ব এই প্রচেষ্টাকে ‘প্রতারণা’ এবং ‘দল ধ্বংসের চক্রান্ত’ হিসেবে দেখছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ছাড়া একটি নতুন ‘পরিচ্ছন্ন’ আওয়ামী লীগ গঠনের ভাবনা নিয়েই চলছে এই উদ্যোগ। এতে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ কিছু নেতাকেও নেতৃত্ব থেকে বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সেইসঙ্গে আনা হচ্ছে পরিচিত কয়েকজন মুখ, যারা অতীতে দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও এখন অনেকটাই ছায়ায় চলে গেছেন।
এ পরিকল্পনা নিয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্ব। তারা মনে করছে, এটি দল ভাঙার একটি ষড়যন্ত্র। আনন্দবাজার জানিয়েছে, ভারতের কূটনৈতিক মহলের একাংশও এই সম্ভাবনাকে আশঙ্কাজনক বলে মনে করছেন। তাদের মতে, হাসিনাবিহীন আওয়ামী লীগ গঠিত হলে দিল্লির পক্ষে তা মোটেই ইতিবাচক হবে না। কারণ, প্রস্তাবিত নতুন নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ পাকিস্তান ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, এবং তাদের ভাবমূর্তি একেবারেই ‘পরিচ্ছন্ন’ নয়।
ভারতের এক সাবেক কূটনীতিক মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে দিল্লির সরাসরি ভূমিকা নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিকভাবে ভারতের আস্থাভাজন একটি রাজনৈতিক শক্তি। যদি এর নেতৃত্ব পাকিস্তান-ঘনিষ্ঠ কারও হাতে চলে যায়, তাহলে সেটি ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানের জন্য একটি বড় বিপর্যয় হয়ে দাঁড়াবে।”
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “২০০৭ সালেও পশ্চিমা শক্তি শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে একটি বিকল্প আওয়ামী লীগ গঠনের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছিল। এবারও সেই চক্রান্ত সফল হবে না।” তাঁর মতে, ঠিক যেভাবে ভারতের কংগ্রেস দলে গান্ধী পরিবারের প্রতি অগাধ আস্থা রয়েছে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের মাঝেও শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের প্রতি সেই একইরকম আস্থা ও বিশ্বাস কাজ করে। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগ টিকবে না। তাঁদের লক্ষ্যই হচ্ছে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করা।”
কলকাতায় আত্মগোপনে থাকা এক আওয়ামী লীগ নেতা আনন্দবাজারকে জানান, ‘রিফাইন্ড’ আওয়ামী লীগের নামে নতুন এই পরিকল্পনাই এখন তাঁদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় দলের নেতাদের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে—শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে তাঁদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেওয়া হবে, এমনকি নির্বাচনে অংশ নিতেও দেওয়া হবে। অন্যথায় তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় দল কী করছে? প্রশ্নের জবাবে দলের সেই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জানান, জেলাভিত্তিক ভার্চুয়াল মিটিং শুরু করেছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, যেখানে শেখ হাসিনা নিজেই যুক্ত হচ্ছেন। এসব বৈঠকে তিনি সরাসরি কর্মীদের বক্তব্য শুনছেন, দিচ্ছেন দিকনির্দেশনা। দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ইতোমধ্যেই ২৩টি জেলায় এই মিটিং সম্পন্ন হয়েছে।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরও নাটকীয় পরিবর্তন আসতে পারে। শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ যেমন অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে, তেমনি দল ভাঙনের আশঙ্কাও বাড়ছে।