ড. ইউনূসের নেতৃত্বে আশার আলো দেখছেন হিলারি ক্লিনটন

বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলা ব্যক্তিদের তালিকায় আবারও জায়গা করে নিয়েছেন নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)। মার্কিন সাময়িকী টাইম প্রকাশিত ২০২৫ সালের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে স্থান পেয়েছেন তিনি। তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন (Hillary Clinton), যিনি টাইম ম্যাগাজিনে ইউনূসকে ঘিরে লিখেছেন একটি হৃদয়ছোঁয়া প্রশংসাপত্র।

হিলারি ক্লিনটন লিখেছেন, ‘গত বছর ছাত্র-নেতৃত্বাধীন এক অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রীর পতনের পর একজন সুপরিচিত নেতা জাতিকে গণতন্ত্রের দিকে পরিচালিত করার জন্য এগিয়ে আসেন—তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস।’ তাঁর চোখে, ড. ইউনূস কেবল একজন অর্থনীতিবিদ নন, বরং একজন নৈতিক পথপ্রদর্শক, যিনি নিপীড়ন থেকে জাতিকে মুক্ত করতে আজও সক্রিয়।

গ্রামীণ ব্যাংক (Grameen Bank) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা চালুর ক্ষেত্রে ইউনূসের অগ্রণী ভূমিকাকেই তুলে ধরেছেন ক্লিনটন। বিশেষ করে, নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে তাঁর ভূমিকা ছিল অসামান্য। ক্লিনটন লিখেছেন, ‘লাখ লাখ মানুষ—যাদের মধ্যে ৯৭ শতাংশই নারী—ব্যবসা গড়ে তুলতে, পরিবারকে টিকিয়ে রাখতে এবং আত্মমর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন ইউনূসের প্রচেষ্টায়।’

তাঁর স্মৃতিচারণায় ক্লিনটন জানান, ইউনূসের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে তখন, যখন ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রে একই ধরনের ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প চালুর জন্য সহায়তা করতে আরকানসাস সফর করেছিলেন, যেখানে বিল ক্লিনটন তখন গভর্নর ছিলেন। সেই সময় থেকেই তিনি ইউনূসের কাজের প্রভাব বিশ্বজুড়ে প্রত্যক্ষ করেছেন বলে জানান সাবেক এই ফার্স্ট লেডি।

টাইম ম্যাগাজিনের ২০২৫ সালের তালিকায় ‘লিডার’ বিভাগে ইউনূস ছাড়াও রয়েছেন যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি নেতা কিয়ার স্টারমার (Keir Starmer), মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক (Elon Musk), সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসাসসহ আরও অনেকে।

এবারের তালিকাটি মোট ছয়টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে: আর্টিস্ট, আইকন, লিডার, টাইটান, পায়োনিয়ার এবং ইনোভেটর। তালিকাটি প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ড. ইউনূসের অবস্থান যে আবারও দৃঢ় হলো, তা নিয়ে সন্দেহ নেই।

ক্লিনটনের ভাষায়, “এখন ইউনূস আবারো তার দেশের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশকে নিপীড়নের ছায়া থেকে বের করে আনছেন, সেই সঙ্গে মানবাধিকার পুনরুদ্ধার করছেন, জবাবদিহি দাবি করছেন এবং একটি ন্যায়সংগত ও মুক্ত সমাজের ভিত্তি স্থাপন করছেন।”

এমন এক সময়ে, যখন বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্ব উদ্বিগ্ন, তখন ড. ইউনূসের মতো একজন নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিত্বের উঠে আসা সত্যিই দেশের জন্য এক নতুন আশার বার্তা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *