এবার বিএনপি-জামায়াত নিয়ে এনসিপি নেত্রী সামান্তা শারমিন’র বিষ্ফোরক বক্তব্য

জাতীয় রাজনৈতিক মঞ্চে নতুন করে বিতর্ক ছড়িয়েছেন সামান্তা শারমিন (Samanta Sharmin)। নিজের দলের আহ্বায়ক নাহিদ (Nahid)–এর বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে এই এনসিপি (NCP) নেত্রী দাবি করেছেন, “পুরো সরকারটাই এখন বিএনপির হয়ে গেছে।”

সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সামান্তা বলেন, “আমাদের সকলের মিলে যে সরকার হওয়ার কথা ছিল, সেটা আর নেই। এখন যে সরকার চলছে, সেটা স্পষ্টভাবে বিএনপির সরকার। কারণ, প্রশাসনে তাদের দখল বেশি, মাঠেও তাদের শক্তি বেশি।”

এই বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে—দলের আহ্বায়কই যিনি দীর্ঘদিন উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন, তিনিই যদি প্রশাসনে বিএনপির প্রভাব মেনে নেন, তবে এতদিন কীভাবে তারা ক্ষমতার অংশ হিসেবে নিজেদের দাবি করতেন? এর জবাবে সামান্তা বলেন, “এটা শুধু প্রশাসন নয়, বরং পুরো সরকারটাই বিএনপির হয়ে গেছে। তারা এখন বেসিক্যালি সরকারের মতো করে কাজ করছে।”

তিনি যুক্তি দেন, “বিএনপি (BNP) বড় রাজনৈতিক দল, এটা ঠিক। কিন্তু তারা তাদের প্রেসার মেকানিজমটা ফুল ফ্লেজে ব্যবহার করছে। এটা একটা বাস্তবতা।”

রাষ্ট্রপতি অপসারণ, গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা, এমনকি জাতীয় ঘোষণা (proclamation)-এর মতো বিষয়ে বিএনপির প্রভাব তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, “যতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমরা তুলেছি, প্রতিটা বিষয়ে বিএনপি ভেট দিয়েছে এবং তাদের মত অনুযায়ী এগুলো অসম্পূর্ণ থেকেছে।”

তিনি আরও বলেন, “বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল, এবং তারা তাদের চাপ প্রয়োগের ক্ষমতা এখন পুরোপুরি ব্যবহার করছে।”

এবার সামান্তা শুধু বিএনপি নয়, জামায়াত (Jamaat)-কেও যুক্ত করেছেন প্রশাসন দখলের অভিযোগে। তিনি বলেন, “আমরা দেখছি, প্রশাসনের সর্বত্র বিএনপি এবং জামায়াত-শিবিরের লোক বসানো হয়েছে। তারা চূড়ান্তভাবে আমাদের কাজে অসহযোগিতা করছে।”

তিনি দাবি করেন, “প্রতিদিন আমরা খবর পাচ্ছি, আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হচ্ছে। বাড়িঘরে হানা দেওয়া হচ্ছে, ঠিক আগের রেজিমের মতো নির্যাতন চলছে।” তার ভাষ্যে, এই চিত্রটাই প্রমাণ করে বর্তমান সরকার আদতে বিএনপির হাতে পরিচালিত হচ্ছে।

জনগণের সঙ্গে থাকাকেই নিজেদের অবস্থান বলেই চিহ্নিত করেন সামান্তা। তিনি বলেন, “নানান রাজনৈতিক দল হয়তো প্রশাসনের সঙ্গে যেতে পারে, ক্ষমতার কেন্দ্রের দিকে হাঁটতে পারে। কিন্তু আমরা সবসময় জনগণের সঙ্গেই থাকব।”

আলোচনায় আসে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে জামায়াত আমিরের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গও। সামান্তা খোলাখুলি বলেন, “আমরা যখন সংস্কার ও বিচার নিয়ে কথা বলছি, তখন একদল লন্ডনে গিয়ে খালেদা জিয়ার ও তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসে নির্বাচনের টাইমলাইন নির্ধারণ করছে।”

তিনি আরও বলেন, “হ্যাঁ, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হতে পারে। সেটা সংস্কৃতির অংশ। তবে আমি আশাবাদী হতাম যদি তারা আওয়ামী লীগের বিচার এবং তাদের নেতাকর্মীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতেন। গঠনমূলক কোনো পরিকল্পনা নিয়ে আলাপ করতেন। কিন্তু সেটা আমরা এখনো দেখিনি। কী আলোচনা হয়েছে, তা অজানা। আশা করব জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।”

এই মন্তব্যগুলো সামনে আসতেই রাজনৈতিক মহলে নতুন করে বিতর্ক ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে—কোন দিকেই যাচ্ছে দেশের প্রশাসন ও ক্ষমতার কাঠামো?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *