কুমিল্লার লালমাই উপজেলার বাগমারা উত্তর ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ইউনিয়ন সম্মেলনে একটি চাঞ্চল্যকর দৃশ্য দেখা গেছে—আওয়ামী লীগের এক স্থানীয় নেতা সামনের সারিতে জামায়াত নেতাকর্মীদের পাশে বসে আছেন। এ দৃশ্যের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে সৈয়দপুরে আয়োজিত এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাগমারা উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। জামায়াতের ব্যানারে আয়োজিত একটি কর্মসূচিতে তার এমন অংশগ্রহণ অনেককেই বিস্মিত করেছে, আবার অনেকে ক্ষুব্ধও হয়েছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, উক্ত সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাগমারা উত্তর ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মাওলানা আবদুল মান্নান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি নাজমুল হাসান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার (Mia Golam Porwar)।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুম, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহজাহান, কুমিল্লা-১০ আসনের এমপি প্রার্থী মাওলানা ইয়াছিন আরাফাত, জেলা জামায়াতের অফিস সম্পাদক গোলাম সরওয়ার মজুমদার কামাল, লালমাই উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আবদুর নূর এবং সেক্রেটারি মাওলানা ইমাম হোসাইন।
সম্মেলনে উপস্থিত অনেক জামায়াত নেতাকর্মী রফিকুল ইসলামের উপস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একাধিক নেতাকর্মী বলেন, “আওয়ামী লীগের সময় যেসব নেতা আমাদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা করেছেন, তারাই এখন জামায়াতের অনুষ্ঠানমঞ্চে। এটা দুঃখজনক ও নীতির পরিপন্থী।”
স্থানীয়রা জানান, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম ২০২৩ সালের ৫ আগস্টের পর কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন। পরে এলাকায় ফিরে জামায়াতের আয়োজিত নানা প্রোগ্রামে অংশ নিতে দেখা যায় তাকে।
সম্মেলনে উপস্থিত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমি এখনও আওয়ামী লীগের পদে আছি, পদত্যাগ করিনি। তবে একজন মুসলমান হিসেবে ইসলামিক প্রোগ্রামে উপস্থিত হওয়া দোষের কিছু না।”
তবে লালমাই উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা ইমাম হোসাইন জানান, “জামায়াতের সম্মেলনে অন্য দলের নেতা-কর্মীদের থাকার সুযোগ নেই। বিষয়টি আমাদের নজরে আসেনি। খোঁজ নিয়ে দলে আলোচনা হবে।”
ঘটনাটি ঘিরে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, দলীয় আদর্শের চেয়ে এখন ব্যক্তিগত অবস্থান আর সুবিধাই যেন বড় হয়ে উঠছে।