কঠোর কর্মসূচির পথ নয়, ঐক্যবদ্ধ রোডম্যাপেই নতুন কৌশলে বিএনপি

দ্রুত নির্বাচন নিশ্চিত করতে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী’ রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে উদ্যোগ নিচ্ছে বিএনপি (BNP)। চলতি এপ্রিলের শেষ অথবা মে মাসের শুরুতে ঢাকায় একটি বড় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই ঐক্যের বার্তা দিতে চায় দলটি। শুরুটা হচ্ছে আজ, গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ১২ দলীয় জোট ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (LDP)-র সঙ্গে বৈঠক দিয়ে।

বিএনপির অভিমত, সরকারের ওপর সরাসরি হামলা বা গণআন্দোলনের পথ এখনই নয়—বরং রাজনৈতিক চাপ ও জনমতের মাধ্যমে নির্বাচনমুখী পরিবেশ গড়ে তোলাই মূল লক্ষ্য। স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে দলটি। বৈঠকে নেতারা বলেন, সরকারকে সহযোগিতা করেই একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আদায় করতে চায় তারা। তাই, দল চায় না সরকার ব্যর্থ হোক, বরং চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ‘সচেতন হোক’।

এ লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও আলোচনা শুরুর চিন্তা রয়েছে। বৈঠকগুলোতে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরির দাবি নিয়ে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচির বিষয়ে মতবিনিময় হবে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি মহলে বার্তা দিতে চায়—বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত নির্বাচনের প্রশ্নে একমত এবং ঐক্যবদ্ধ।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর মতে, “নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যেই হতে হবে। এরপর রমজান, ঈদ, পরীক্ষা ও বর্ষাকাল—তখন নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন পিছিয়ে গেলে তা অগণতান্ত্রিক শক্তির উত্থানকে উসকে দিতে পারে।”

এ অবস্থায়, সামনের কোরবানির ঈদ ও বর্ষাকাল আসার আগেই বিএনপি তাদের নিজস্ব কিছু কর্মসূচি পালনেরও চিন্তা করছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, রাজনৈতিক নিপীড়নসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিক্ষোভ ও সমাবেশের সম্ভাবনাও উঁকি দিচ্ছে। ঢাকায় বড় দুটি সমাবেশ আয়োজনের পরিকল্পনাও রয়েছে।

তবে বিএনপি এখনই কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছে না—সেটা নির্ভর করছে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর। যদি সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের রোডম্যাপ বা গঠনমূলক উদ্যোগ না আসে, তাহলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করছে দলটি। তখন প্রয়োজন হলে কঠোর কর্মসূচির দিকেও যেতে পারে বিএনপি।

গত বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus)-এর সঙ্গে বৈঠক ছিল বিএনপির। বৈঠকে উঠে এসেছে, সরকারের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কোনো তাড়না নেই—বরং উপদেষ্টাদের মনোভাবে দেখা গেছে গা ছাড়া ভাব। নির্বাচনের সময় নিয়ে সরকার ‘জুন নয়, পরের ডিসেম্বর’ পর্যন্ত ভাবছে বলেই মনে করছে বিএনপি।

জামায়াতে ইসলামীও সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে—রোজার আগেই নির্বাচন চাই। এই অবস্থানকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি এবং বিষয়টি স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও এসেছে আলোচনায়।

এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ বলেন, “সরকারের লোকজন সময় নিয়ে একেক সময় একেক কথা বলছে। এতে বিভ্রান্ত হচ্ছে মানুষ। তাই দ্রুত রোডম্যাপ চাই।” তিনি জানান, বিএনপির সঙ্গে সবসময়ই আলোচনার মাধ্যমে কাজ করে এলডিপি। এবারও নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে মতবিনিময় হবে।

১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, “নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট একটি টাইম ফ্রেম প্রয়োজন। তা না হলে প্রস্তুতির সুযোগ থাকে না। অন্তর্বর্তী সরকারের এ বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা দরকার।”

ফলে আজ থেকে শুরু হচ্ছে বিএনপির ধারাবাহিক বৈঠকের নতুন ধারা। বৈঠকগুলোতে থাকছে তথ্যভিত্তিক আলোচনা, ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দায়িত্বশীল আচরণের অনুরোধ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে গভীর পর্যবেক্ষণের পরামর্শ।

সংকেত পরিষ্কার: বিএনপি এখন সংঘাত নয়, রাজনৈতিক কৌশলে এগিয়ে যেতে চায়। কিন্তু সরকার যদি ‘সময়ক্ষেপণের রাজনীতি’ চালিয়ে যায়, তাহলে আন্দোলনের চেহারাও বদলে যেতে পারে—তা বোঝাতেই আজকের বৈঠকগুলোর আয়োজন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *