রাজধানীর উত্তপ্ত রাজপথে ফের দৃশ্যমান হচ্ছে আওয়ামী লীগ (Awami League) নেতাকর্মীদের চোরাগোপ্তা তৎপরতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের রক্ত এখনও শুকায়নি, এমন বাস্তবতায় ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের একাংশ। ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়মিত মিছিল-মিটিং করছেন তারা, যাদের অনেকের বিরুদ্ধেই রয়েছে হত্যা মামলাসহ গুরুতর অভিযোগ।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবার কঠোর অবস্থান নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (Dhaka Metropolitan Police – DMP)। সোমবার রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সরাসরি নির্দেশ দেন—আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতাকর্মীদের চিহ্নিত করে তাদের বাসায় তল্লাশি চালাতে হবে এবং প্রয়োজনে গ্রেফতার করতে হবে।
তিনি বলেন, “যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, যারা আইন লঙ্ঘন করছে—তাদের কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া যাবে না।” এই নির্দেশনার আওতায় ডিএমপির ক্রাইম ও গোয়েন্দা বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও, নাগরিক তথ্য হালনাগাদে সিআইএমএস (সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) ফরম পূরণ বাধ্যতামূলক করে নতুন করে ঢাকায় আগত এবং ঢাকা ছেড়ে যাওয়া নাগরিকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের ওপরও জোর দেওয়া হয়।
ডিএমপি কমিশনার সভায় জানান, মামলা রুজু হচ্ছে, কিন্তু নিষ্পত্তির হার আশানুরূপ নয়। আদালতের জারি করা ওয়ারেন্টগুলোর বেশিরভাগই এখনও তামিল হয়নি। ফলে অনেক আসামি আইন ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব ঘাটতি দ্রুত দূর করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেন তিনি।
অপরাধ পরিস্থিতি মূল্যায়নে সভায় উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এসএন মো. নজরুল ইসলাম, (সিটিটিসি) মো. মাসুদ করিম, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার ও সব থানার অফিসার ইনচার্জসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। মার্চ মাসের অপরাধ পরিসংখ্যান উপস্থাপন করেন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মো. ফারুক হোসেন।
সভায় ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন কমিশনার। তিনি বলেন, “রিকশাওয়ালা অন্যায় করলে প্রসিকিউশন করেন, কিন্তু মারধর নয়। মানবিক আচরণ বজায় রাখুন।” ওসিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমলযোগ্য কোনো ঘটনা চাপা দেওয়া যাবে না। প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং তদন্তেও গাফিলতি চলবে না।”
থানাভিত্তিক টহল টিম এবং সিকিউরিটি গার্ডদের সমন্বয়ে অপরাধ প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশ দেন ডিএমপি প্রধান। বলেন, “জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দেখাতে হবে।”
সব মিলিয়ে, রাজনৈতিক উত্তেজনা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষিতে রাজধানীতে শুরু হয়েছে একপ্রকার পুলিশি অভিযান। একদিকে রাজনৈতিক কর্মসূচি, অন্যদিকে পুলিশের ‘অভিযান’—নতুন করে ঢাকার রাজনীতিতে চাপা উত্তেজনা তৈরি করছে।