প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (Prime Asia University)–এর শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী জাহিদুল ইসলাম পারভেজের নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। সোমবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে ছাত্রদল নেতারা ক্ষোভ, হতাশা ও হুঁশিয়ারির সুরে প্রশাসন ও প্রতিপক্ষের প্রতি কঠিন বার্তা দেন।
ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, “পারভেজ ছিলেন আমাদের সংগঠনের একজন সাহসী কর্মী এবং গণঅভ্যুত্থানের এক অগ্রসেনানী। তাকে যেভাবে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা মেনে নেওয়া যায় না। এখন থেকে যদি ছাত্রদলের কোনো নেতাকর্মীর উপর হামলা হয়, তাহলে আমরা আর শাবানার মতো ক্ষমা করব না।” এসময় তিনি তারেক রহমান (Tarique Rahman)–এর ৩১ দফা কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, প্রতিশোধ নিতে হলে, ছাত্রদল তাই-ই নেবে।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হলেও, কিছু গোষ্ঠী এখন এটিকে কলুষিত করছে। এই ব্যানার ব্যবহার করে যারা ক্যাম্পাসে অগণতান্ত্রিক আচরণ করছে, তাদের প্রতি আমাদের হুঁশিয়ারি রইল।”
গণেশ চন্দ্র রায়, এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের একটি বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, “তিনি বলেছেন প্রশাসন বিএনপির পক্ষে কাজ করছে—এই মন্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। প্রকৃতপক্ষে এখন ক্যাম্পাসগুলোতে ফ্যাসিবাদের দোসররা ঘাঁটি গেড়েছে। ৭১ ও ২৪ সালের পরাজিত শক্তিরা আজ একাকার।”
তিনি অভিযোগ করেন, “ক্যাম্পাসে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (Ziaur Rahman)–এর ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, অথচ আমরা সহিষ্ণু থেকেছি। আজ অন্যদের ব্যানার বহাল তবিয়তে দেখা যাচ্ছে। এমনকি এফ রহমান হলে আমাদের কর্মীদের গেস্টরুমে আটকে রাখা হয়েছিল, যেটিকে তারা মুড়ি পার্টি বলে চালিয়ে দিয়েছে।”
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পর থেকে আমরা অভাবনীয় সহিষ্ণুতা দেখিয়েছি। এখন সময় এসেছে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার। টেম্পু স্ট্যান্ড বা ট্রাক স্ট্যান্ড বলে আমাদের কার্যক্রমকে খাটো করা বন্ধ করুন। যৌক্তিক সমালোচনা করুন, আমরা শোধরানোর চেষ্টা করব। কিন্তু ‘মিস হেডলাইন’ দিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো গ্রহণযোগ্য নয়।”
এসময় ঢাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন অভিযোগ করেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীর মুখোশ পরে কেউ কেউ বৈষম্যবিরোধী ব্যানার ব্যবহার করে ছাত্রলীগের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে পিছপা হব না।”
তিনি বলেন, “প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন মেধাবী ছাত্রনেতাকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাতে করে ৫ আগস্ট পূর্ববর্তী সন্ত্রাসের দিনগুলো ফিরে আসার আভাস দেখা যাচ্ছে। কেউ যেন আমাদের উদারতাকে দুর্বলতা না ভাবে।”
শিপন আরও বলেন, “জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কোনো গুপ্ত সংগঠন নয়, গোপন রাজনীতিতে আমরা বিশ্বাসী নই। সরকারি দপ্তরগুলোতে যে অনির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিরা রয়েছে, তাদের দ্রুত পদত্যাগ করতে হবে। না হলে দেশের ছাত্রসমাজ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবে।”
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ঢাবি ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাসুম বিল্লাহ, সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান অনিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন শাওন ও শামিম আক্তার শুভ, সাংগঠনিক সম্পাদক নূর আলম ভূঁইয়া ইমনসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতাকর্মীরা।