সমালোচনার মুখে ডিএনসিসির উপদেষ্টার পদ ছাড়লেন প্রবাসী শিক্ষাবিদ ড. আমিনুল

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)-এর প্রশাসকের উপদেষ্টা হিসেবে সদ্য নিয়োগ পাওয়া লেখক এবং প্রবাসী শিক্ষাবিদ ড. আমিনুল ইসলাম (Dr. Aminul Islam) শেষ পর্যন্ত তীব্র সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নিজের ফেসবুক পেইজে সংক্ষিপ্ত একটি পোস্টে তিনি জানান, “আই অলরেডি রিজাইন্ড, পিস।”

এই পদত্যাগ আসে মাত্র পাঁচদিন আগে—১৭ এপ্রিল—ডিএনসিসি (Dhaka North City Corporation) থেকে তাঁর উপদেষ্টা পদে নিয়োগের ঘোষণার পরপরই ব্যাপক বিতর্কের সূত্রপাত হওয়ার পর। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ৫৩ ধারার ভিত্তিতে জারি করা সেই নিয়োগ আদেশে বলা হয়, প্রশাসকের পরামর্শের প্রয়োজনে এই নিয়োগ করা হয়েছে এবং তা অবৈতনিক হবে।

কিন্তু নিয়োগ ঘোষণার পরপরই সামাজিক মাধ্যমে নেটিজেনদের একাংশ প্রশ্ন তুলেন—একজন এস্তোনিয়ার নাগরিক কীভাবে একটি বাংলাদেশি সিটি করপোরেশনের উপদেষ্টা পদে আসীন হতে পারেন? অনেকেই জানান, তিনি তো বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বহু আগেই ছেড়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে একাধিক ফেসবুক গ্রুপে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে।

অভিযোগ উঠেছে, এই নিয়োগে প্রভাব ছিল স্থানীয় সরকার পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার। যদিও ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ (Mohammad Ejaz) বিষয়টি স্পষ্টভাবে অস্বীকার করে বলেন, “এটা ঠিক উপদেষ্টা নয়, বিশেষজ্ঞ কমিটিতে তাঁকে যুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সমালোচনার কারণে সে নিজেও থাকতে চাইছে না, আমরাও বাদ দিয়েছি।”

প্রসঙ্গত, ড. আমিনুল ইসলামের জন্ম ঢাকার নাখালপাড়ায়। ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে, তিনি স্নাতক শেষ করেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপর সুইডেনে মাস্টার্স এবং ইংল্যান্ডে পিএইচডি করেন। বর্তমানে তিনি ইউরোপের উত্তর-পূর্বের দেশ এস্তোনিয়ার (Estonia) এন্টারপ্রেনারশিপ ইউনিভার্সিটিতে টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে সিনিয়র লেকচারার হিসেবে কর্মরত।

শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি একজন লেখকও। ২০২৩ সালে তাঁর লেখা প্রবন্ধগ্রন্থ ‘লাইফ অ্যাজ ইট ইজ’ রকমারি বেস্ট সেলার পুরস্কার পায়। চলতি বছর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত তাঁর দুটি বই—‘নিলী নীলিমা’ ও ‘গ্রীষ্মের ছুটিতে দুঃস্বপ্ন’ পাঠকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

নেটিজেনদের অনেকেই উল্লেখ করেছেন, আমিনুল ইসলাম প্রায় পাঁচ মাস আগে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্টে উপদেষ্টা হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। এই তথ্য সামনে আসার পর বিতর্ক আরও ঘনীভূত হয়।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ২০ মার্চ ডেনমার্কে বাংলাদেশের দূতাবাসে পাঠানো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠিতে উল্লেখ করা হয় যে, ড. আমিনুলের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে এবং তাঁর বাংলাদেশি পাসপোর্ট জব্দের অনুরোধ জানানো হয়।

সব মিলিয়ে, নাগরিকত্বের বৈধতা, নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং প্রভাবশালী মহলের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছিল—তা শেষ পর্যন্ত একজন প্রতিশ্রুতিশীল লেখক ও শিক্ষাবিদের পদত্যাগে গড়িয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *