তদবির বাণিজ্যে শতকোটি টাকা: ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়েছেন একজন

তদবির বাণিজ্য, ঘুষ লেনদেন ও ঠিকাদারি তদবিরে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিস্তৃত দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ার পর মো. মোয়াজ্জেম হোসেন এবং তুহিন ফারাবী (Tuhin Farabi)–কে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে কেউ আবার বিদেশে পালিয়ে থাকারও তথ্য মিলেছে, যা প্রশাসন এবং জনগণের উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার (Asif Mahmud Sajib Bhuiyan) সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা বদলি, নিয়োগ এবং টেন্ডার বাণিজ্যের মাধ্যমে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়, বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সচিবালয়ের ভেতরে ও বাইরে প্রভাব বিস্তার করে চলতেন তিনি। এমনকি পুলিশ, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও আনসার–সবখানে তার হস্তক্ষেপ ছিল বলে জানা গেছে।

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের (Nurjahan Begum) ব্যক্তিগত কর্মকর্তা তুহিন ফারাবী এবং ডা. মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধেও চিকিৎসক বদলি ও নিয়োগে কোটি টাকার কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, তারা প্রতিটি চিকিৎসক ও নার্সের বদলিতে লাখ লাখ টাকা আদায় করতেন এবং হজ টিমে অন্তর্ভুক্তির জন্য পর্যন্ত ঘুষ নিতেন।

অভিযোগ ওঠার পর ২১ এপ্রিল মোয়াজ্জেম ও ফারাবীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে ডা. মাহমুদুল হাসান বর্তমানে একজন রোগীর সঙ্গে রাশিয়ায় রয়েছেন এবং তার দেশে ফেরা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন দাবি করেন, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন কারণ তার সামনে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ভাইভা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ওঠা ৪০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগকে ‘ভুয়া’ ও ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’র ফল বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি দাবি করেন, তিনি ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর নেতা হওয়ায় গণঅধিকার পরিষদের (Gana Adhikar Parishad) সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন এবং তারাই এখন সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

তবে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান পাল্টা বক্তব্যে বলেন, “সরকারই মোয়াজ্জেমকে নিয়োগ দিয়ে সরিয়েছে। আমরা কোনো অভিযোগ করিনি। সে দায় এড়াতে আজেবাজে বলছে।”

ঘটনাটি নিয়ে প্রশাসনের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সাবেক সচিব একেএম আব্দুল আউয়াল বলেন, “তাদের আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত। এত মানুষ মিথ্যা বলবে না।” একইসঙ্গে অন্য সচিবরা বলেন, ‘এপিএস একা কখনো এত দুর্নীতি করতে পারে না’, তাই উপদেষ্টার কার্যালয়ের ভেতরে থাকা অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত হওয়া জরুরি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, ডা. মাহমুদুল হাসান ৫ আগস্টের পর দেশে ফিরে ঠিকাদারদের দিয়ে স্বাস্থ্যখাতে বদলি বাণিজ্যে যুক্ত হন এবং তার বিরুদ্ধে রাশিয়ায় অর্থ পাচারের অভিযোগও রয়েছে।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মো. মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, “অভিযোগগুলোর সত্যতা তদন্ত করেই বের করতে হবে। যদি সত্যি হয়, তাহলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

নিয়মিত সরকারি দায়িত্ব পালনের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের পর্দা ফাঁস হচ্ছে এখন। এ ঘটনায় সরকারের নীরবতা না ভেঙে যদি বাস্তবসম্মত তদন্ত না হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের আস্থা আরও একধাপ নেমে যেতে পারে— এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *