কুমিল্লার রাজনীতিতে একসময় যিনি ‘সবকিছু নিয়ন্ত্রণকারী’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন, সেই আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার (A K M Bahauddin Bahar) এখন নিঃস্ব। আওয়ামী লীগের সাবেক তিনবারের সংসদ সদস্য এবং কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকা অবস্থায় যিনি রাজত্ব চালাতেন, আজ তিনি পরিবারসহ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন।
সরকার পতনের পর আদালতের নির্দেশে তাঁর নামে থাকা বাড়ি, ব্যাংক হিসাব এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান একের পর এক জব্দ হচ্ছে। কুমিল্লা নগরীর মুন্সেফবাড়ির তাঁর বিলাসবহুল বাসা এখন ফাঁকা পড়ে রয়েছে, অফিস তালাবদ্ধ, আর এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাহার ও তাঁর পরিবার সীমান্তপথে ভারতে পালিয়েছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁর বাসায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এখনো দেয়ালে আগুনের পোড়া দাগ স্পষ্ট।
তাহসিন বাহার সূচনা (Tahsin Bahar Suchona), বাহারের মেয়ে ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের অপসারিত মেয়র, তাঁর সঙ্গেই পালিয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। বাসার সামনের রাস্তার চিত্রও বদলে গেছে—যেখানে একসময় বিলাসবহুল গাড়ির সারি দেখা যেত, এখন ছোট ছেলেরা নির্বিঘ্নে ক্রিকেট খেলছে।
বাহারের নিয়ন্ত্রণাধীন কুমিল্লার বিভিন্ন মার্কেট ও ভবনও হাতছাড়া হয়েছে। রামঘাটলার মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়, টাউন হল সুপারমার্কেট, এবং তাঁর মালিকানাধীন সোনালী আবাসিক হোটেলও জব্দ প্রক্রিয়াধীন। সোনালী স্কয়ার মার্কেটের শতাধিক দোকানের ভাড়া নিয়েও চলছে অনিশ্চয়তা। ব্যাংক হিসাব জব্দ থাকায় হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচারের সন্দেহ করছেন অনেকে।
আবু রায়হান (Abu Raihan), বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক, অভিযোগ করেছেন, বাহার ও তাঁর মেয়ের নির্দেশেই আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা হয়েছিল এবং এর ন্যায়বিচার দাবি করেছেন।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার (Amirul Kayser) জানান, বাহার টাউন হলের জমিতে অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ করে দোকান ভাড়া বাবদ বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করতেন। বর্তমানে সেই আয়ের অর্থ সরাসরি টাউন হলের ব্যাংক হিসাবে জমা হচ্ছে।
বাহারের বর্তমান অবস্থান নিশ্চিত করা যায়নি। হোয়াটসঅ্যাপেও যোগাযোগের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এক সময়ের দাপুটে রাজনীতিকের এমন পতনে কুমিল্লার রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানামুখী আলোচনা।