নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য এখন পর্যন্ত ৬৫টি নতুন রাজনৈতিক দল আবেদন করেছে। আবেদনের অপেক্ষায় আছে আরও দুই ডজন। আবেদনকারীদের মধ্যে কিছু সম্ভাবনাময় দলের পাশাপাশি এমনও দল আছে যাদের প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে চশমার দোকান, মাদরাসার কক্ষ বা ঠিকাদারি অফিস।
তালিকার ৩ নম্বর দল বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণময় পার্টি (Bangladesh Probashi Kallyanmoy Party) এর চেয়ারম্যান মো. শিফন ভুঁইয়া, যিনি ১৫ বছর সিঙ্গাপুরে কাটিয়ে দেশে ফিরে কোতোয়ালি থানার রামাকান্ত নন্দী লেনে একটি চশমার দোকান চালাচ্ছেন। তিনি জানিয়েছেন, দোকানটিই অস্থায়ীভাবে দলের অফিস করা হবে। আগামী সংসদ নির্বাচনে তিনি গোপালগঞ্জ-২ আসনে প্রার্থী হতে চান।
আরেক আবেদনকারী দল বাংলাদেশ জনগণের দল (বাজদ) (Bangladesh Janaganer Dal – Bajd) এর সাধারণ সম্পাদক এইচ এম রেজাউল করিম খোকন জানিয়েছেন, তার দলের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে নয়াপল্টনের একটি ঠিকাদারি অফিস। পিরোজপুর ও কাউখালীতে অফিস করার পরিকল্পনা থাকলেও এখনো সেভাবে সহযোগিতা মেলেনি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তালিকার ৩৪ নম্বরে থাকা জনতা মহাজোট বাংলাদেশ (Janata Mahajot Bangladesh) একটি হাফেজি মাদরাসার একটি রুমকে দলীয় অফিস হিসেবে ব্যবহার করছে। দলটির সভাপতি আলহাজ মাওলানা এ কে এম নুরুল ইসলাম জানান, সাংগঠনিকভাবে সফল হলে এই রুমটি স্থায়ী অফিসে পরিণত হবে।
একইভাবে, ৫৯ নম্বর দল অহিংস গণ-আন্দোলন (Ahinsha Gono Andolon) আইটি সামগ্রী সংরক্ষণের একটি রুম ভাড়া নিয়ে অফিস চালাচ্ছে। দলের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, ফার্মাসিউটিক্যাল সেক্টরের বৈষম্য দূর করতেই দল গঠন করেছেন।
১২ নম্বর দল বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস) (Bangladesh Bekar Samaj – BABES) এর সভাপতি মো. হাসান নিজের স্ত্রীর বাসায় দলীয় অফিস পরিচালনা করছেন। তিনি জানান, বেকারত্ব দূর করতে তিনি কাজ করতে চান এবং ২০০৮ সালেও নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিলেন।
২০০৮ সালের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে, নামসর্বস্ব দলগুলোকে ঠেকাতে নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও কার্যকরভাবে সব সময় তা সম্ভব হয়নি। এবারের পরিস্থিতি কিছুটা আলাদা; নতুন দলগুলোর মধ্যে সম্ভাবনাময় দলের উপস্থিতিও দেখা যাচ্ছে।
গত আট মাসে ২৪টি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এর মধ্যে আছে জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি), নিউক্লিয়াস পার্টি অব বাংলাদেশ (এনপিবি) ও ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বাধীন জনতা পার্টি বাংলাদেশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, পুরনো দলগুলোর প্রতি অনাস্থা ও নেতৃত্বে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা থেকেই নতুন নতুন দল গড়ে উঠছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাশেদা রওনক বলেন, নেতৃত্বের একক ধারার প্রতি আস্থা কমে যাওয়ায় ছোট ছোট দল তৈরি হচ্ছে। কবি ও বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার মনে করেন, রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকেই মানুষ দল গঠন করছে।
বাংলাদেশ জন-অধিকার পার্টি (Bangladesh Jan-Adhikar Party) এর চেয়ারম্যান ইসমাইল সম্রাট বলেন, রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ করতেই তারা দল গঠন করেছেন। আমজনতা দলের (Amjanata Dal) সাধারণ সম্পাদক তারেক রহমান জানান, ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাতেই তাদের দলের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত দলগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ রক্ষণশীল দল, জনতা কংগ্রেস পার্টি, বাংলাদেশ মুক্তি ঐক্য দল, বাংলাদেশ নাগরিক আন্দোলন পার্টি, বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলন, নিউক্লিয়াস পার্টি, ইউনাইটেড বাংলাদেশ পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সহ আরও অনেক দল।
নিবন্ধনপ্রক্রিয়ায় নামসর্বস্ব দল ছাঁটাইয়ের চাপের মধ্যেই, বাংলাদেশে রাজনীতির নতুন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।