সংস্কার প্রশ্নে ঐক্য গড়তে গণসংহতি, ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক

চলমান রাষ্ট্রসংস্কার কর্মসূচিতে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলতে এগিয়ে এসেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি (National Citizen Party – NCP)। বুধবার বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে গণসংহতি আন্দোলন (Ganosamhati Andolon) এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (Islami Andolon Bangladesh)-এর সঙ্গে আলাদা বৈঠকে মিলিত হয় দলটি।

প্রথম বৈঠকে এনসিপি ও গণসংহতির শীর্ষ নেতারা সংস্কার প্রশ্নে ঐক্যমত তৈরির লক্ষ্যে আলোচনা করেন। বৈঠক শেষে গণসংহতির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি (Jonaed Saki) জানান, “যেসব বিষয়ে আমরা একমত হবো সেগুলোকে জাতীয় সনদে রূপ দেব, আর যেখানে মতপার্থক্য থাকবে সেগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরে সমর্থন আদায় করবো।” তিনি আরও বলেন, দেশের মৌলিক পরিবর্তনে প্রয়োজনীয় সংবিধান সংস্কারের জন্য গণপরিষদ নির্বাচন অত্যাবশ্যক।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (Nahid Islam) বলেন, “গণসংহতির সঙ্গে অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি, কিছু বিষয়ে দ্বিমতও রয়েছে। তবে আলোচনার মাধ্যমে আমরা একটি শক্ত ভিত্তির ওপর ঐক্য গড়তে চাই।” আওয়ামী লীগকে দলগতভাবে বিচার ও নিষিদ্ধ করার বিষয়েও গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বৈঠকে এনসিপির পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আদিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম, আশরাফ উদ্দিন মাহদী, অনিক রায়, যুগ্ম সদস্য সচিব ফরিদুল হক ও মোল্লা ফারুক আহসান। গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষে অংশ নেন নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য তাসলিমা আখতার, হাসান মারুফ রুমি, মনির উদ্দিন পাপ্পু প্রমুখ।

বিকেলে এনসিপির প্রতিনিধিরা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কার্যালয়ে যান। বৈঠক শেষে নাহিদ ইসলাম জানান, অধিকাংশ বিষয়ে দু’পক্ষের মধ্যে ঐক্যের জায়গা পাওয়া গেছে। যেমন, এনসিপি উচ্চ কক্ষে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের পক্ষে থাকলেও ইসলামী আন্দোলন দুই কক্ষেই এই ব্যবস্থা চায়। তবে গণপরিষদ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগের বিচার ইস্যুতে দুই দলের মধ্যে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (Syed Muhammad Rezaul Karim) বলেন, “জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানে যে পরিবর্তন শুরু হয়েছে, সেটাকে এগিয়ে নিতে এনসিপির চিন্তাধারার সাথে আমাদের অবস্থান অনেকটাই মিলে গেছে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ইসলাম, দেশ ও মানবতার জন্য কাজ করবে।”

তিনি আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে বলেন, “হাজার হাজার মায়ের কোল খালি করা ফ্যাসিস্টদের দলগত বিচার হবে। এরপরই নির্বাচন নিয়ে ভাবা যাবে।”

বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও নির্বাচন কমিশন সংস্কার নিয়েও আলোচনা হয়। দুই দলই নির্বাচন কমিশনের কার্যকলাপ নিয়ে জনগণের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

রাজনৈতিক সংলাপের এ ধারা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে নেতারা বলেন, ভবিষ্যতে মাঠপর্যায়ে জনমত গড়ে তুলতেও যৌথ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *