সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার (Sagar Sarowar) ও মেহেরুন রুনি (Meherun Runi) আত্মহত্যা করেননি, বরং পরিকল্পিতভাবে খুন হন—এমন তথ্য উঠে এসেছে এই আলোচিত হত্যাকাণ্ড তদন্তে গঠিত টাস্কফোর্সের সাম্প্রতিক অগ্রগতি প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুনে অংশ নেয় দুইজন, তবে ডিএনএ পরীক্ষায় অস্পষ্টতা থাকায় এখনো তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
এই প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে—এ হত্যার পেছনে দাম্পত্য কলহ, চুরি বা পেশাগত বিরোধের কোনো প্রমাণ মেলেনি। ভিসেরা রিপোর্টেও চেতনানাশক বা বিষজাতীয় কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি। সাগর-রুনিকে খুন করতে ব্যবহৃত হয় বাসার রান্নাঘরে থাকা ছুরি ও বটি। ময়নাতদন্তে দেখা যায়, হত্যার পরও ক্ষত নিয়েই কিছু সময় বেঁচে ছিলেন তারা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, হত্যার আগমুহূর্তে সন্তান মেঘকে সঙ্গে নিয়ে একই খাটে ছিলেন সাগর-রুনি। ধারণা করা হচ্ছে, রাত ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে ঘটে এ নির্মম হত্যাকাণ্ড। প্রথমে সাগর ও পরে রুনিকে ছুরিকাঘাত করা হয়। তবে ব্লাড প্যাটার্ন বিশ্লেষণ বলছে, রুনি আগে মারা যান, পরে সাগর। সাগর বাধা দিতে পারেন—এমন শঙ্কায় তার হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছিল, তবে রুনি নারী হওয়ায় তার ক্ষেত্রে তা প্রয়োজন মনে করেনি খুনিরা।
গোয়েন্দারা যখন সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছান, তখন পর্যন্ত তা সংবাদকর্মী ও স্থানীয়দের চলাচলে অনেকটাই দূষিত হয়ে গিয়েছিল। রান্নাঘরের বারান্দার একটি ভাঙা অংশও নতুন বলে উল্লেখ করেছে তদন্ত কমিটি, যেটি দিয়ে সহজে ঢোকা-বের হওয়া সম্ভব হলেও পূর্ণাঙ্গ কোনো পায়ের ছাপ মেলেনি।
হাইকোর্ট (High Court) ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়, তদন্তের দায়িত্ব র্যাবের কাছ থেকে তুলে নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার অভিজ্ঞ সদস্যদের নিয়ে নতুন একটি টাস্কফোর্স গঠন করতে। কারণ ২০১২ সালে র্যাব (RAB) তদন্তের দায়িত্ব নিলেও এক দশকেও তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। নির্দেশনা অনুযায়ী, নবগঠিত টাস্কফোর্সকে চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে বলা হলেও তা সম্ভব হয়নি এখনো।
নতুন তদন্তে এ পর্যন্ত সাতজন সাংবাদিকসহ মোট ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নমুনায় ৫ থেকে ৬ জনের জেনেটিক উপাদান পাওয়া গেছে, যা প্রযুক্তিগতভাবে শনাক্ত করা অত্যন্ত কঠিন। সিআইডির সঙ্গে পরামর্শ করেও টাস্কফোর্স নিশ্চিত হয়েছে—একসাথে দুই বা তিনজনের ডিএনএ থাকলে তা শনাক্তযোগ্য, কিন্তু বেশি হলে ফলাফল অস্পষ্ট থেকে যায়।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টিভির বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। হত্যার পর রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। আজও এ মামলার সুরাহা হয়নি, আর তদন্ত প্রতিবেদনগুলো ঘুরছে এক সংস্থা থেকে অন্য সংস্থায়।