বাংলাদেশের রাজনীতিতে চলমান উত্তেজনার মধ্যে নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে বেগম খালেদা জিয়ার (Begum Khaleda Zia) ফেরা নিয়ে জটিলতা। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ বিমানের (Biman Bangladesh Airlines) নিয়মিত ফ্লাইটে তার ফেরার কথা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত তিনি কাতারের আমীরের দেওয়া একটি বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্সে দেশে ফিরছেন বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir)।
শনিবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে দলের মহাসচিব এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে সিলেট বিএনপি জানায়, খালেদা জিয়া নিয়মিত ফ্লাইটে সিলেট হয়ে ঢাকায় ফিরবেন এবং এ জন্য নেতাকর্মীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী শনিবার রাতে মানবজমিনকে জানান, “কাতারের আমীরের দেওয়া এয়ার এম্বুলেন্সেই খালেদা জিয়া ফিরছেন।” হিথ্রো বিমানবন্দরে শ্লট চেয়ে আবেদন করা হয়েছে এবং তা নিশ্চিত হলেই নির্দিষ্ট সময় জানানো হবে।
এদিকে, খালেদা জিয়ার ফেরার জন্য নির্ধারিত ছিল ৫ মে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২০২ ফ্লাইট। কিন্তু ওই ফ্লাইটে দায়িত্বে থাকা দুই কেবিন ক্রু, আল কুবরুন নাহার কসমিক ও মো. কামরুল ইসলাম বিপোনকে শুক্রবার মধ্যরাতে হঠাৎ সরিয়ে দেওয়া হয়। বিমানের ফ্লাইট সার্ভিস বিভাগ জানিয়েছে, নিরাপত্তা শঙ্কা এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রথমে কসমিক, বিপোনসহ চিফ পার্সার নিশি এবং জুনিয়র পার্সার রিফাজকে ওই ফ্লাইটের জন্য মনোনীত করা হলেও পরে রাতারাতি বদলে দেওয়া হয় ফ্লাইট পার্সার ডিউক এবং ফ্লাইট স্টুয়ার্ডেস আনহারা মারজানকে। ফ্লাইট সার্ভিস বিভাগ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, আল কুবরুন নাহার কসমিক অতীতে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার ফ্লাইটে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতেন এবং ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তার বিরুদ্ধে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ, ১৮ বার কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া এবং একাধিকবার গ্রাউন্ডেড হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে, কামরুল ইসলাম বিপোনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি দলের নানা কর্মসূচিতে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। তিনি ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২-এ ফুল দেওয়া, শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে প্রীতি ম্যাচ আয়োজন, এমনকি বিমানে শেখ রাসেল দিবস পালনের মতো কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলেন।
এই সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কায় দুজনকে সরিয়ে দিয়ে শেষ মুহূর্তে ফ্লাইট পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়। ফলে বিজি-২০২ ফ্লাইটে খালেদা জিয়ার ফেরার সম্ভাবনা বাতিল হয়ে যায়।
বর্তমানে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যেই খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা ঘিরে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আবেগঘন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে কাতারের আমীরের সরাসরি সহায়তায় এয়ার এম্বুলেন্সে তার ফেরা বিএনপির জন্য রাজনৈতিকভাবে একটি বড় বার্তা বহন করছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।