নারী সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট বাতিলের দাবি উঠলে বাকি সব সংস্কার কমিশনের রিপোর্টকেও বাতিলযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা উচিত—এমনই দৃঢ় অবস্থান জানিয়েছেন উমামা ফাতেমা (Umama Fatema)। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেত্রী তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে সরকারের সাম্প্রতিক সংস্কার প্রক্রিয়া ও নারী অধিকার ইস্যুতে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াকে ‘নাটক’ বলে কটাক্ষ করেন।
তিনি লিখেছেন, “জুলাইয়ের পর মেয়েদের সাইডে বসায় দিয়ে এখন রাজনৈতিক পাড়ায় নারী অধিকার নিয়ে সালিশ বসছে দেখছি। হায়রে নাটক!”—এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, নারীদের প্রশ্নে চলছে কৌশলী রাজনৈতিক ব্যবহার।
উমামা বলেন, সরকার একটি ঐক্যমত কমিশন গঠন করেছে, যার মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দল নিজেদের মতো করে সংস্কার প্রস্তাবনার পক্ষে বা বিপক্ষে মত দিতে পারে। “সব রিপোর্টেই বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু শুধুমাত্র নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিলের দাবি তোলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “নারীদের কতটা অধিকার থাকবে তা নিয়ে যেন নারীদের চেয়ে পুরুষদেরই বেশি মাথাব্যথা। নারীরা কোনো ব্যবহারের বস্তু নয় যে গদি সুরক্ষিত হলেই রান্নাঘরে ফিরে যাবে।”
নারী অধিকার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলের আন্তরিকতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে উমামা আরও বলেন, “অভ্যুত্থানের পর দেশের ৫০% জনগণের অধিকারের প্রশ্ন যাদের কাছে উটকো ঝামেলা মনে হয়, তারা আদৌ কী ধরনের রাজনীতি করতে চায়, তা জনগণও জানে।”
তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “বাংলাদেশে নারীদের অধিকার ছাড়া কোনো রাজনীতি আর মূলধারায় টিকবে না। জুলাই অভ্যুত্থানে সেই বার্তা জনগণ ইতোমধ্যে দিয়েছে। স্টেজে দাঁড়িয়ে গলা ফাটালেই নারীদের প্রান্তিক করা যাবে না।”
উল্লেখ্য, সম্প্রতি নারী সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলাম (Hefazat-e-Islam) চার দফা দাবি তোলে, যার একটি ছিল কমিশন বাতিল। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত এক মহাসমাবেশে এই দাবিগুলো উত্থাপন করেন হেফাজতের নেতারা।
চমকপ্রদভাবে, ওই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন এনসিপি’র (জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ (Hasnat Abdullah)। তিনি নারী কমিশনের সুপারিশ নিয়ে হেফাজতের উত্থাপিত “কনসার্নগুলো” দ্রুত সমাধানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizens’ Party বা NCP) ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে একটি নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার পথ খুঁজছে। উমামা ফাতেমার বক্তব্য সেই পটভূমিতে নারীবাদী অবস্থান থেকে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবেই উঠে এসেছে।