দুই পুত্রবধূ সহ খালেদা জিয়াকে অভ্যর্থনা জানাতে বিএনপির ব্যাপক প্রস্তুতি

চার মাস চিকিৎসার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া (Khaleda Zia) আগামীকাল মঙ্গলবার দেশে ফিরছেন। তার আগমন উপলক্ষে ঢাকাজুড়ে অভূতপূর্ব প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি (BNP)। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে ব্যাপক উৎসাহ ও আবেগ। দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে জাতীয় ও দলীয় পতাকা হাতে রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে নেতাকর্মীরা তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (Mirza Fakhrul Islam Alamgir) বলেছেন, “চার মাস পর নেত্রী দেশে ফিরছেন, তাই নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ কাজ করছে। কিন্তু আমাদের দায়িত্ব শৃঙ্খলা বজায় রাখা, যাতে জনদুর্ভোগ না হয়।” তিনি সব নেতাকর্মীকে যানজট এড়াতে এবং শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ উপলক্ষে গত কয়েকদিন ধরে একের পর এক প্রস্তুতি সভা করেছে বিএনপি। শনিবার দলের কেন্দ্রীয় সভা ও রবিবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি পৃথক প্রস্তুতি সভা করে প্রস্তুতিমূলক কাজ চূড়ান্ত করেছে। সংগঠিতভাবে নেতাকর্মীরা কোথায় অবস্থান নেবেন তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী (Ruhul Kabir Rizvi) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি বিমানবন্দর থেকে লা মেরিডিয়ান পর্যন্ত থাকবে, ছাত্রদল থাকবে লা মেরিডিয়ান থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত, যুবদল খিলক্ষেত থেকে র‌্যাডিসন পর্যন্ত। একইভাবে দক্ষিণ বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, ওলামা দল, তাঁতী দল, জাসাস, মৎস্যজীবী দল, মুক্তিযোদ্ধা দল ও মহিলা দল নিজেদের নির্ধারিত এলাকায় অবস্থান করবে।”

তিনি স্পষ্ট করে দেন, “কেউ মোটরসাইকেলে বা পায়ে হেঁটে গাড়ির সঙ্গে চলতে পারবে না। বিমানবন্দর ও চেয়ারপারসনের বাসভবনে প্রবেশও নিষিদ্ধ।” এই নির্দেশনা মেনে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ অভ্যর্থনার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।

বিএনপির পক্ষ থেকে ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গেও সমন্বয় করা হয়েছে যাতে যানজট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। সম্ভাব্য বিশাল ভিড় সামাল দিতে ট্রাফিক বিভাগকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। দলের শীর্ষ নেতারা ঢাকার প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সুনির্দিষ্ট গাইডলাইনও পৌঁছে দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়া কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির দেওয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকায় পৌঁছাবেন। তার সঙ্গে থাকছেন পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান (Zobaida Rahman), যিনি ১৭ বছর পর স্বদেশে ফিরছেন। ধানমণ্ডির মাহবুব ভবনে তার থাকার জন্য বাসা সংস্কারের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুম্মন জানিয়েছেন, “বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সহধর্মিণী আসছেন বলেই পুরো বাসায় চলছে সাজসজ্জার তোড়জোড়। নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে, সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সংযোগ থেকে শুরু করে জেনারেটর পর্যন্ত সব কিছু প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ, জোবাইদা রহমানের আগমনের আগেই সবকিছু সম্পন্ন হবে।”

জানা গেছে, মাহবুব ভবনে জোবাইদার নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মী, পুলিশ প্রহরা এবং আর্চওয়ে স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ পরিদর্শন করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে এক-এগারোর সময় এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ (Awami League) সরকারের সময় রাজনৈতিক প্রতিকূলতায় পড়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন জোবাইদা রহমান। বিদেশে থাকা অবস্থায় তিনি ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন থেকে মেডিসিনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তার বাবাও দেশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন; স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী তার চাচা।

সবমিলিয়ে মাহবুব ভবন এখন আবেগ, স্মৃতি আর প্রত্যাশায় মুখর। বহু বছরের প্রবাসজীবন শেষে জোবাইদা রহমানের ফেরাকে কেন্দ্র করে যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে ধানমণ্ডির এই ঐতিহাসিক বাড়ি।

সবমিলিয়ে বলা যায়, খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন শুধু ব্যক্তিগত আনন্দের বিষয় নয়, বরং তা পরিণত হয়েছে বিএনপির জন্য একটি বড় রাজনৈতিক মুহূর্তে। এবং এই মুহূর্তকে স্মরণীয় করে তুলতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *