আপনি নিজে কতটা ‘পাকিস্তানবাদ’ , জেনে নিন সহজ একটি উপায়ে …

‘পাকিস্তানবাদ’ কি আজও বাংলাদেশে প্রাসঙ্গিক? এ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে একটি গভীর রাজনৈতিক ও দার্শনিক বিতর্ক উসকে দিয়েছেন লেখক, কবি ও রাজনীতিক রক মনু। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত এক দীর্ঘ ও তর্কিত পোস্টে তিনি ‘পাকিস্তানবাদ’ শব্দটির আক্ষরিক, রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক মাত্রা ব্যাখ্যা করে এর অস্তিত্ব নিয়ে জনচেতনায় প্রশ্ন তুলেছেন।

রক মনু বলেন, “মাফ চাইবার তেমন কোন অর্থ নাই” উল্লেখ করে রাজনৈতিক ক্ষমাপ্রার্থনার পেছনের ফলাফলহীনতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “ধরেন মাহফুজের দাবিতে জামাত মাফ চাইলো, তারপর আবার আগের মতোই রাজনীতি করতে থাকলো—তাতে লাভটা কি হলো?”

তিনি দাবি করেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তানের সঙ্গে একটি ধরনের কনফেডারেশন তৈরির চিন্তা সামনে এসেছিল, যা রুখে দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। এরপর তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, “যেমন একটি রাষ্ট্র ভেঙে দুটি রাষ্ট্র হতে পারে, তেমনি দুটি রাষ্ট্র মিলেও তো একটি রাষ্ট্র হতে পারে। তাহলে ‘পাকিস্তানবাদ’ কি আসলেই অসম্ভব?”

রক মনু এরপর মূল তর্কের কেন্দ্রে চলে আসেন—‘পাকিস্তানবাদ’ যদি বাস্তব কোনো রাজনৈতিক অবস্থান হয়, তবে তার ভিত্তি কোথায়? তিনি বলেন, বাংলাদেশে ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ মুসলমান, এবং যদি এই ধারণা বদ্ধমূল হয় যে বাংলাদেশের মুসলমানদের নিরাপত্তা পাকিস্তানের মধ্যে থাকলেই বেশি—তাহলে এই চিন্তা নিজেই হয়ে উঠতে পারে ‘পাকিস্তানবাদ’।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, “পাকিস্তানের পরমাণু বোমা থাকার কারণে অনেকের মনে নিরাপত্তার একটি কৃত্রিম জোয়ার তৈরি হচ্ছে, আর বাংলাদেশকে এখনো অনেকে একটি ‘ইন্ডিয়ান ষড়যন্ত্র’ ভাবছে, যেটা দেশের স্বাধীনতার ভিত্তিকে দুর্বল করছে।”

তার মতে, যদি এই ধরনের ‘সিকিউরিটি-বেইসড পাকিস্তানপ্রীতি’ রাজনীতিতে শক্তি পায়, তাহলে ভবিষ্যতে এমন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসতে পারে যারা বাংলাদেশকে ঐতিহাসিক ‘ভুল’ হিসেবে বিবেচনা করে তা ‘সংশোধন’ করতে চাইবে।

সবশেষে তিনি একটি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন—“আপনি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করুন—আপনি কি মনে করেন পাকিস্তানের মধ্যে থাকলেই মুসলিম বাঙালির নিরাপত্তা বেশি? এই প্রশ্নের উত্তরেই আপনি বুঝবেন আপনার ভিতরে ‘পাকিস্তানবাদ’ আছে কিনা।”

বিশ্লেষণ:

রক মনুর এই লেখাটি রাজনৈতিক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণের দৃষ্টিকোণ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ হুঁশিয়ারি। তিনি মূলত ‘পাকিস্তানবাদ’কে সরাসরি রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে নয়, বরং একটি মনস্তাত্ত্বিক নিরাপত্তাবোধ এবং ঐতিহাসিক অনিশ্চয়তার ছায়া হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *