হাসিনার ভয়ে যারা গর্তে ছিল তারাই সংস্কারের তালিম দিচ্ছে : আমীর খসরু

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (Amir Khasru Mahmud Chowdhury) বলেছেন, শেখ হাসিনার শাসনামলে যারা ‘ভয়ে গর্তে’ লুকিয়ে ছিলেন, তারাই এখন সংস্কারের কথা বলে বিএনপিকে জ্ঞান দিচ্ছেন। মঙ্গলবার (১৩ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী (Dr. Zafrullah Chowdhury)–এর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ভাসানী জনশক্তি পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, “যারা শেখ হাসিনার চাপ সহ্য করতে না পেরে গর্তে ঢুকেছিল, আন্দোলনের মাঠে যাদের দেখা যায়নি, তারাই আজ আমাদের সংস্কারের তালিম দিচ্ছে।” এমনকি অনেকেই নাকি রাস্তায় ‘উঁকি-ঝুঁকি’ দিলেও, ক্ষমতার চাপ এলেই আবার গর্তে ফিরে গেছেন বলেও ব্যঙ্গ করেন তিনি।

বিএনপির সংস্কার পরিকল্পনা প্রসঙ্গে খসরু জানান, “আমরা আজকের জন্য না, বরং শেখ হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশ কেমন হবে—তা ভেবেই ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। এর আগেও ২৭ দফা দিয়েছি, এমনকি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া (Begum Khaleda Zia) ‘ভিশন ২০৩০’ দিয়েছিলেন।”

তিনি দাবি করেন, “সংস্কার নিয়ে অতীতে কোনো রাজনৈতিক দল জনগণের দ্বারে যায়নি। অথচ আমরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে আমাদের সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরছি। নির্বাচন-পরবর্তী জাতীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে এই ৩১ দফা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা আগেই জানানো হয়েছে।”

খসরু জোর দিয়ে বলেন, “দিনশেষে যে কোনো সংস্কার হতে হবে জনগণের সম্মতিতে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। বাইরের কোনো শক্তি কিংবা অগণতান্ত্রিক চাপে এদেশে সংস্কার হতে পারে না।” তিনি প্রশ্ন তোলেন, “তাহলে কেন বিলম্ব হচ্ছে? জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে যেসব সংস্কার সম্ভব, আমরা তাতে প্রস্তুত।”

আলোচনা সভায় দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়েও সরব ছিলেন তিনি। তার ভাষায়, “সরকারের কথাবার্তা শুনলে মনে হয় বাংলাদেশ যেন বিনিয়োগের স্বর্গরাজ্য হয়ে গেছে! অথচ বাস্তবে গত ১০ মাসে বিনিয়োগ কমছে। মানুষ বুঝে গেছে—নির্বাচিত সরকার ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগ আসে না। বিনিয়োগ লংটার্ম সিদ্ধান্ত, আর বিদেশিরা চায় স্থিতিশীল ও নির্বাচিত সরকার।”

মানবিক করিডোর প্রসঙ্গে তিনি উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, “কার সাথে আলোচনা করে মানবিক করিডোর স্থাপন হচ্ছে? এটা তো কোনো নির্বাচিত সরকারের কাজ নয়। দেশের কোনো রাজনৈতিক দল জানে না, সিভিল সোসাইটিও জানে না। তাহলে কার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে?” তিনি প্রশ্ন রাখেন, “আমরা কি বাংলাদেশকে আরেকটা গাজায় পরিণত করতে চাই?”

সভায় সভাপতিত্ব করেন ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল এবং সঞ্চালনা করেন মহাসচিব আবু ইউসুফ সেলিম। আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)–এর মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্য–র মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি–র সাইফুল হক, জেএসডি–র শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ূম, ভাসানী জনশক্তি পার্টির আব্দুল কাদের, পারভীন নাসের খান ভাসানী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র–র অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ তালুকদার এবং মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *