ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের সীমান্তে বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে সংঘটিত এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ (BSF) প্রায় ৭৫০ জন মানুষকে বাংলাদেশে পুশইনের চেষ্টা চালায়। তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (BGB) ও স্থানীয় জনতার তৎপরতায় সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। রাতভর সীমান্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, তবে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
স্থানীয় প্রশাসন ও একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই পুশইন চেষ্টায় যারা ছিল, তাদের মধ্যে অধিকাংশই বাংলাদেশের নাগরিক হলেও কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থীও ছিল। এদের মধ্যে অধিকাংশকে আগে ত্রিপুরা রাজ্যে ও সম্প্রতি রাজস্থানে আটক করা হয়েছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এই গোষ্ঠীগুলোর সংখ্যা ছিল প্রায় ৭৫০, যাদেরকে বাংলাদেশে ঠেলে দিতে বিএসএফ গভীর রাতে কৌশলে সীমান্তে জড়ো করেছিল।
ঘটনার সময়, বিজিবি আগাম তথ্য পেয়ে সতর্ক অবস্থান নেয়। একই সঙ্গে, স্থানীয় মসজিদের মাইক ব্যবহার করে এলাকাবাসীকে সতর্ক করা হয়। সিঙ্গারবিল, বিষ্ণুপুর, নলঘরিয়া, মেরাসানী ও নোয়াবাদী এলাকার শত শত মানুষ দেশীয় অস্ত্রসহ সীমান্তে জড়ো হন। অনেকেই ফেসবুকে লাইভে এসে অন্যদের আহ্বান জানান। এমন দৃঢ় প্রতিরোধ দেখে বিএসএফ পিছু হটে।
সিঙ্গারবিল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বাচ্চু মিয়া বলেন, “রাত দুইটার দিকে বিজিবি আমাদের খবর দিলে আমরা মাইকিং করি এবং মানুষকে জড়ো করি। পরে বিএসএফ সরে যায়। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক।”
ইউনিয়নের আরেক মেম্বার মামুন চৌধুরী বলেন, “লোকজনের জড়ো হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিএসএফ বাধ্য হয় পিছু হটতে। আমরা বিজিবির সঙ্গে থেকে পরিস্থিতি সামলাই। তবে কতজনকে পুশইনের জন্য আনা হয়েছিল, সেটা নিশ্চিত বলতে পারছি না।”
বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (UNO) সাধনা ত্রিপুরা বলেন, “সীমান্তে এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। জনগণের সক্রিয় সহযোগিতায় পুশইনের চেষ্টা প্রতিহত হয়েছে। সতর্ক অবস্থান এখনও বজায় রাখা হয়েছে।”
বিজিবি ২৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাব্বার আহাম্মেদ জানিয়েছেন, “বিএসএফ পুশইনের পরিকল্পনার খবর পেয়ে আমরা সতর্ক হই। পরে স্থানীয় জনতাও আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়। ফলে পুশইনের চেষ্টা সফল হয়নি।”
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। তবে প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারণে বড় ধরনের কোনো সংঘাতের আশঙ্কা আপাতত নেই।