ছাত্রদলের জন্য বাসা ভাড়া, বিএনপি নেতাদের অর্থ সহায়তা—বিস্ফোরক অভিযোগ নুরুল হক নুরের

গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর (Nurul Haque Nur) সম্প্রতি এক টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের সঙ্গে তার এবং তার সংগঠনের সম্পর্ক নিয়ে একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। বিশেষ করে আন্দোলনের পেছনে আর্থিক জোগান, কৌশল নির্ধারণ এবং ছাত্র রাজনীতির মাঠপর্যায়ের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তিনি যে তথ্য দিয়েছেন, তা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে।

আলোচনার এক পর্যায়ে নুর বলেন, “ইশরাক ভাই, তাবিথ ভাইদের কাছ থেকে পয়সা নিয়ে এদের (ছাত্রনেতাদের) বাসা ভাড়া দিয়েছি।” তিনি আরও দাবি করেন, বিএনপির নেতারা সরাসরি এই আন্দোলনে অর্থ জোগান দিয়েছেন। তার ভাষায়, “আমি তো জানি, এই নেতাদের ডিভাইস চেঞ্জ করা, নতুন ডিভাইস কেনার টাকাটা সালাহউদ্দিন ভাই এখানে পাঠিয়েছিলো।”

তিনি বলেন, “বরকতউল্লাহ বুলু পলাতক, আরেকজনকে দিয়ে পাঠাচ্ছে। নতুন ডিভাইস কেনা লাগবে—ওই টাকাটাও পর্যন্ত পাঠিয়ে দিয়েছে।” তার বক্তব্য অনুযায়ী, আন্দোলনের পেছনে ছিল সুসংগঠিত সমন্বয় এবং পরিকল্পনা, যার অংশ ছিল টেলিকমিউনিকেশন সুবিধা ও ডিভাইস কেনা।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথেও ছাত্র আন্দোলনের কৌশল নিয়ে যোগাযোগ ছিল বলে দাবি করেন নুর। তার ভাষায়, “তারেক রহমানের সাথে আলাপ করে এই আন্দোলনে কিভাবে ছাত্রদল, যুবদল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার দিন ছাত্রদল যেন ব্যাংকারের মতো দাঁড়িয়ে থাকে—ওইদিনই ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করতে হবে—এই সমস্ত ফর্মুলা আমরা দিয়েছি।”

এখানে ‘আমরা’ বলতে তিনি কাদের বোঝাচ্ছেন, তা পরিষ্কার না হলেও, ইঙ্গিত মিলেছে যে, এর পেছনে আরও কিছু কৌশলী ব্যক্তি জড়িত ছিলেন। নুর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আজকে মাস্টারমাইন্ড বা এই সমস্ত মানুষের নাম তো তারা জীবনেও নিবে না।”

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বাংলাদেশের যুব শক্তিকে ব্যবহার করা এবং পররাষ্ট্র মিশনে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তোলেন তিনি। নুর বলেন, “একবার বলেছিলাম, মালয়েশিয়াতে আমাদের ছাত্র তরুণদেরকে মামলা দিয়েছিল, যারা অ্যাম্বাসেডর—সেই অ্যাম্বাসেডর এখনো আছে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। এখনো যারা বিদেশি মিশনে আছে, দেশের মধ্যে স্মরণ হয়নি।”

এছাড়া দেশের প্রশাসনিক কাঠামো নিয়েও ক্ষোভ ঝাড়েন নুর। বলেন, “দেশের দশ বিভাগের যারা বিভাগীয় কমিশনার—তারা এই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। কিন্তু কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”

সবশেষে তিনি জানান, আন্দোলনে সহযোগিতাকারীদের বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের উপদেষ্টাদের কথা শুনে তিনি বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। তার ভাষায়, “দুইজন উপদেষ্টার কথা শুনে বেয়াক্কেল হলাম, এজন্য যে তারা বলছে, ‘ওদেরকে দিয়ে ভালো কাজ করানো যায়।’”

নুরুল হক নুরের এই বক্তব্যগুলো রাজনৈতিক মহলে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে বিএনপি ও ছাত্রদলের সঙ্গে তার সরাসরি আর্থিক এবং কৌশলগত সম্পর্কের এই খোলামেলা স্বীকারোক্তি আন্দোলনের নেপথ্যের গল্পকে আরও ঘনীভূত করে তুলেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *