জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী উত্তাল সময়ে দেশের বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া শত শত মানুষের প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিক অবস্থান জানাল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী (Bangladesh Army)। বৃহস্পতিবার (২২ মে) আইএসপিআর (ISPR) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, পরিস্থিতির ভয়াবহতায় নিরাপত্তাহীনতায় পড়া নাগরিকদের মানবিক বিবেচনায় সাময়িক আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিগত সরকারের পতনের পর দেশে আইনশৃঙ্খলা চরমভাবে ভেঙে পড়ে। রাজনৈতিক সহিংসতা, সরকারি স্থাপনায় হামলা, মব জাস্টিস, অগ্নিসংযোগ, ডাকাতি এবং লুটপাটের ঘটনা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এই অস্থিরতায় আতঙ্কিত হয়ে বহু মানুষ সেনানিবাসের নিরাপদ আশ্রয়ের দ্বারস্থ হন।
প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব সেনানিবাসে জীবন রক্ষার্থে রাজনৈতিক নেতা, বিচারক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য ও সাধারণ নাগরিকরা আশ্রয় প্রার্থনা করেন। তৎকালীন অবস্থার প্রেক্ষিতে আশ্রয়প্রার্থীদের পরিচয় যাচাইয়ের চেয়ে জীবন রক্ষাই ছিল প্রধান বিবেচ্য।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই সংকটকালে ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তি, ৫ জন বিচারক, ১৯ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ৫১৫ জন পুলিশ সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা, ৫১ জন নারী ও শিশুসহ মোট ৬২৬ জনকে সাময়িকভাবে সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া হয়। এদের মধ্যে অধিকাংশ ১ থেকে ২ দিনের মধ্যেই সেনানিবাস ত্যাগ করেন।
আইএসপিআরের ভাষ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে আশ্রয়প্রার্থীদের জীবন রক্ষাই ছিল সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্য। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ৫ জন ব্যক্তিকে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা ও অভিযোগের ভিত্তিতে যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়।
উল্লেখযোগ্যভাবে, গত বছরের ১৮ আগস্ট আইএসপিআর এই বিষয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এবং ১৯৩ জন আশ্রয়প্রাপ্তের একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তালিকায় সাধারণ পুলিশ সদস্য (৪৩২ জন) ও একজন এনএসআই সদস্য বাদে বাকি আশ্রয়প্রাপ্তদের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল। সামগ্রিক বিষয়টি তখনই নিষ্পত্তি হয়েছিল বলেও উল্লেখ করা হয়।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ তোলা হয়। তাদের এমন তৎপরতা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে বলেও দাবি করা হয়।
এই প্রেক্ষাপটে, সেনাবাহিনী জানায়—আশ্রয়প্রার্থীদের তালিকা এবার পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ করা হলো, যার মধ্যে রয়েছে ৬২৬ জন ব্যক্তি, যার মধ্যে ৪৩২ জন সাধারণ পুলিশ সদস্য ও ১ জন এনএসআই সদস্যও অন্তর্ভুক্ত। সকলকে এ ধরনের অপপ্রচার থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তির শেষাংশে, সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা ও আস্থার সঙ্গে জাতির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।