ডা. শফিকুর রহমান (Dr. Shafiqur Rahman), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “আমরা এখন জাতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে দাঁড়িয়ে আছি।” শনিবার কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার উদ্বোধনী অধিবেশনে তিনি এই মন্তব্য করেন। জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ দ্রুত বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সংঘাতের মাধ্যমে নয় বরং অর্থবহ সংলাপের মাধ্যমেই জাতীয় সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা উচিত।
তিনি সরাসরি বলেন, “সংলাপ আয়োজনের দায়িত্ব সরকারের। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সর্বদলীয় বৈঠকের আহ্বান জানাই।” আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের আশায় তিনি বলেন, “জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে এ বৈঠক থেকে আশাব্যঞ্জক কিছু আসবে বলে আমরা আশা করি।”
সরকারের নীতিনির্ধারকদের সমালোচনা করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “৭১ থেকে আজ পর্যন্ত অনেক কিছু অর্জিত হলেও জনগণের মৌলিক চাহিদাগুলো অপূর্ণই থেকে গেছে।” ’২৪ সালের ঘটনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “যা ঘটেছে তা বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বের সামনে নির্মম এক দৃশ্য হয়ে উঠেছে।”
তিনি আরও বলেন, টানা ১৫ বছর ধরে দেশ এক দুঃশাসনের অধীনে ছিল, এবং জনগণের অধিকার বারবার ক্ষুণ্ন হয়েছে। পরপর তিনটি নির্বাচনকে তিনি ‘জাতির সঙ্গে তামাশা’ হিসেবে অভিহিত করেন।
ভবিষ্যতের জন্য দুইটি রোডম্যাপ—একটি নির্বাচনসংক্রান্ত, অপরটি সংস্কারমূলক—চেয়ে তিনি বলেন, “এই রোডম্যাপ প্রকাশ না করা হলে জনগণের আস্থা ফিরে আসবে না।” তাঁর মতে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য এই দুইটি রোডম্যাপ অপরিহার্য।
আওয়ামী লীগের বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, “বিচার প্রক্রিয়া অদৃশ্য। অপরাধচক্র বাড়ছে। বিচারের নামে অবিচার আমরা চাই না।”
মানবিক করিডোর প্রসঙ্গে আমীর জামায়াত জানান, “জাতীয় স্বার্থ জড়িত থাকায় তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নিলে বিপদ ডেকে আনবে।” তিনি পরামর্শ দেন, সব পক্ষের সাথে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হোক।
চট্টগ্রাম বন্দর (Chattogram Port) নিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, “এটি দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। হঠাৎ করে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ ঠিক নয়।”
সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, “এই প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। সেনাবাহিনীকে নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করা উচিত নয়।”
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, “পরিবর্তনের ৯ মাস পার হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে হবে। আমরা তার উপর আস্থা রাখতে চাই, কারণ আমরাই তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছি। সকল দলকে সহযোগিতার আহ্বান জানাই।”
গাজা ও রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “যুদ্ধ বিরতি নয়, যুদ্ধ বন্ধ চাই। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান।”
সমাপনী বক্তব্যে বলেন, “আমরা অনেক ত্যাগ করেছি এবং আরও প্রস্তুত আছি। আল্লাহর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার মাধ্যমে একটি মানবিক ও কল্যাণমুখী বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের সংগ্রাম চলবে। সকল দেশপ্রেমিক শক্তির কাছে আমাদের আহ্বান—এসো, এই রাষ্ট্রগঠনের প্রক্রিয়ায় অংশ নিই।”