অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus)-এর সঙ্গে এক বৈঠকে বিএনপি (BNP) একটি লিখিত বক্তব্য পেশ করেছে, যেখানে বর্তমান সরকারের নিরপেক্ষতা, বিতর্কিত উপদেষ্টাদের ভূমিকা এবং গণআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। দলটি বলেছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশে ফ্যাসিবাদ পতনের পর জনগণের প্রত্যাশায় একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার গঠিত হলেও বাস্তবে সেই আকাঙ্ক্ষার পূরণ আজও প্রশ্নবিদ্ধ।
বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চলা ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ ছিল গণঅভ্যুত্থান। এরপর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠনের মাধ্যমে একটি বৈষম্যহীন, মানবিক ও ন্যায়ের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন জনগণ। কিন্তু গত সাড়ে ৯ মাসে যে বাস্তবতা দেখা গেছে, তা হতাশাজনক। বিএনপির দাবি, এই সময়ে সরকারের কিছু কর্মকাণ্ড সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি করেছে।
বিশেষভাবে মানবিক করিডর ও চট্টগ্রাম বন্দরসংক্রান্ত সরকারি কর্মকাণ্ডে জাতীয় স্বার্থ কতটা রক্ষিত হচ্ছে, সে প্রশ্ন তোলে দলটি। তারা স্পষ্ট করে জানায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীতিগত ও দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার নেই বলেই জনগণ মনে করে। এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত থাকা উচিত।
বিএনপি আরও দাবি করে, সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা কয়েকজন ব্যক্তি সরাসরি নতুন একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, যা নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তোলে। তারা বলেন, সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অব্যাহতি দেওয়া জরুরি, বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সংক্রান্ত গেজেট নোটিফিকেশন ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। তারা মনে করে, নির্বাচন কমিশন গঠনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হলেও কিছু পক্ষ আদালতের রায়কে হাতিয়ার করে কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব ছিল আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা এবং যথাসময়ে মেয়র ইশরাক হোসেন (Ishraq Hossain)-কে শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা করা।
এছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিকে উদ্দেশ্যমূলক ও বিভ্রান্তিকর বলে আখ্যায়িত করে বিএনপি। তাদের মতে, এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা।
লিখিত বক্তব্যে বিএনপি আরও উল্লেখ করে, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং তা নির্বাচন প্রক্রিয়ার সঙ্গে একযোগে চলা সম্ভব। তারা জানায়, পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তি ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচার অব্যাহত থাকবে।
সবশেষে, দলটি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলে, এই লিখিত পরামর্শগুলো যদি আগের মত উপেক্ষিত হয়, তাহলে তা সরকারকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে তাদের অনীহা তৈরি করবে। তারা প্রত্যাশা করে, সরকার আইন-শৃঙ্খলা, দ্রব্যমূল্য, বিনিয়োগ এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।