সোমবার ইশরাকের শপথের প্রস্তুতি মন্ত্রণালয়ের

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন (Ishraq Hossain)–কে শপথ পড়ানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সবকিছু পরিকল্পনামতো চললে আসছে সোমবার, ২৬ মে তারিখেই শপথগ্রহণ হতে পারে বলে মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

এই শপথ ঘিরে শুরু থেকেই রাজনৈতিক উত্তাপ, আইনি জটিলতা ও প্রশাসনিক দ্বিধা তৈরি হয়েছে। এরই মাঝে উচ্চ আদালতের রায় ও সংশ্লিষ্ট রিট খারিজ হওয়ায় প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নেওয়ার পথ সুগম হয়েছে। তবে আপিল বিভাগ (Appellate Division) থেকে ভিন্ন কোনো নির্দেশনা এলে আবারো আইনি অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করছেন আইনজীবীরা।

ডিএসসিসিতে নাগরিক সেবায় অচলাবস্থা

ইশরাক হোসেনের শপথ বিলম্বে ডিএসসিসিতে কার্যত অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। মেয়র ছাড়া কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তালা মেরে আন্দোলন করছেন ডিএসসিসি (DSCC)–র কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শনিবারও নগর ভবনে আন্দোলন চলে, যেখানে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, “মেয়র ছাড়া কোনো ফাইল নড়বে না।”

এই অবস্থায় জনসেবায় যেন সমস্যা না হয়, সেজন্য আন্দোলনকারীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ইশরাক নিজেই। তিনি বলেন, “জনগণের অধিকার আদায়ে আমাদের লড়তে হয়েছে, অথচ এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হওয়ার কথা ছিল।”

মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্তের পথে

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণার প্রজ্ঞাপন স্থগিত চেয়ে করা রিট আদালত খারিজ করে দেয়। এরপর থেকেই সোমবারের মধ্যে শপথ অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে মন্ত্রণালয়।

তবে বিষয়টি আরও জটিল করে তুলেছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা। উপদেষ্টা পরিষদেও রদবদলের গুঞ্জন থাকায় সিদ্ধান্তে দ্বিধা দেখা দেয়।

আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এগোচ্ছে পরিকল্পনা

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বলেন, “আদালতের রায় আমরা পেয়েছি। সে আলোকে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যেহেতু ২৬ মে’র মধ্যে একটা বাধ্যবাধকতা আছে, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, এখনো দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি, তবে ২৬ মে’র মধ্যেই শপথ অনুষ্ঠান হবে।

অন্যদিকে, প্রশাসনিক রদবদলের অংশ হিসেবে বর্তমান প্রশাসক শাহজাহান মিয়াকে ওয়াসার এমডি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইশরাক শপথ নেওয়ার পর তার কাছ থেকেই মেয়রের দায়িত্ব বুঝে নেবেন।

রিটকারীর নতুন আইনি উদ্যোগ

রিটকারীর আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন জানান, নির্বাচন কমিশনের গেজেট ও ট্রাইব্যুনালের রায় স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে একটি আবেদন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রবিবার তা দাখিল করা হতে পারে এবং রবি বা সোমবারই শুনানি হতে পারে। যদি আদালত নতুন কোনো আদেশ না দেয়, তাহলে শপথ অনুষ্ঠান আগামী সোমবারের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

এদিকে ইশরাক হোসেন এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো আমন্ত্রণ পাননি। তিনি বলেন, “আমাকে শপথের ব্যাপারে এখনো কিছু জানানো হয়নি। জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আমাদের লড়তে হলো, যা একটি স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায়ই হওয়ার কথা ছিল।”

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২৬ মে’র মধ্যেই এই বহুল আলোচিত শপথ অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে—যা দিয়ে শেষ হবে দীর্ঘদিনের একটি অনিশ্চয়তার অধ্যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *