ঢাকা: বিএনপির ঘনিষ্ঠ এক প্রভাবশালী গণমাধ্যম ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন ব্লুমবার্গের সাংবাদিক নাজমুল আহসান। তিনি দাবি করেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির কৌশল কোনো বিচ্ছিন্ন সিদ্ধান্ত নয়—এটি তারেক রহমান ও সালাহউদ্দিন আহমেদের যৌথ পরিকল্পনার ফল। সালাহউদ্দিন তারেকের পূর্ণ সমর্থন নিয়েই কাজ করছেন এবং দুজন মিলেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
এছাড়া, বিএনপি ও সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের মধ্যে এক ধরনের “নীরব সমঝোতা” হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বিএনপি এখন ওয়াকারকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য মনে করছে। ইউনূস যদি পদত্যাগ করতে চান, তাহলে বিএনপি তাতে বাধা দেবে না।
তবে এই বার্তার পাশাপাশি এসেছে এক ধরনের প্রচ্ছন্ন হুমকি—নির্বাচন বিলম্বিত হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে। বিএনপি প্রয়োজনে কঠোর হতে প্রস্তুত বলেই জানান সাংবাদিকের সূত্র।
পরিস্থিতি শিথিল করতে একটি রাজনৈতিক “ইঙ্গিত” বা অঙ্গীকার কাজে আসতে পারে বলে মত দিয়েছেন ওই সূত্র। উদাহরণ হিসেবে তিনি খলিলুর রহমানের দায়িত্ব থেকে অপসারণ বা রদবদলের কথা বলেন।
অন্যদিকে, যমুনার পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে শান্ত বলে জানান তিনি। তবে এই আত্মবিশ্বাসের উৎস পরিষ্কার নয়। ইউনূস এখন আগের চেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং অনেকটা চ্যালেঞ্জিং মনোভাব নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
সূত্রটি আরও দাবি করেন, বিএনপি নীরবে ইঙ্গিত দিয়েছে যে ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন তারিখ হতে পারে। তবে ড. ইউনূস এখনও ৩০ জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের অবস্থানে অনড়। তিনি চান না সেনাবাহিনী বা বিএনপি কেউই নির্বাচনসূচি নির্ধারণ করুক। ফলে আপসের সবচেয়ে বাস্তবসম্মত তারিখ হতে পারে এপ্রিল।
এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার থেকে বিএনপিকে কিছু ছাড় বা ইঙ্গিত দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে, সংশ্লিষ্টরা পরিষ্কারভাবে ‘না’ বলে জানিয়ে দিয়েছেন। সবশেষ বড় ধাক্কা আসতে পারে নির্বাচন কমিশনকে কেন্দ্র করে।
ড. ইউনূস নিজের কৌশলে বিএনপিকে কোণঠাসা করতে চাইছেন বলেই মনে হচ্ছে। তার প্রধান যুক্তি হলো—তিনি না থাকলে এই পরিবর্তন (হোক তা সেনাবাহিনীর হাতে হস্তান্তর কিংবা নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে) বিশৃঙ্খলায় রূপ নেবে। তখন বিএনপিকে একটি অস্থিতিশীল ও দুর্বল রাষ্ট্র কাঠামো উত্তরাধিকার হিসেবে পেতে হবে—যার বৈধতাও থাকবে বিতর্কিত।
তিনি মনে করেন, যদি বিএনপি একটি কার্যকর রাষ্ট্র চায়, তাহলে এই সরকারকে জুন পর্যন্ত কাজ করতে দিতে হবে। এই সময়ের মধ্যেই পুলিশের সংস্কার, স্থানীয় প্রশাসন পুনর্গঠন এবং নির্বাচন কমিশন সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো শেষ করা জরুরি।
তবে ড. ইউনূস পদত্যাগ থেকে পুরোপুরি সরে আসেননি। জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার প্রস্তুতি এখনও চলছে। ভাষণের খসড়া এখনও টেবিলে রয়েছে এবং আগামী মাসেই তা সম্প্রচার হতে পারে। এই ভাষণ হবে কি শুধু নিজের সাফল্যের বর্ণনা? নাকি নিজের অপসারণের ব্যাখ্যা?—তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তটি নিতে হবে ইউনূসকেই—তবে বিএনপির অবস্থানও এর ওপর প্রভাব ফেলবে।
ব্লুমবার্গের সাংবাদিক নাজমুল আহসানের ফেসবুক পোস্ট থেকে অনুবাদিত