একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে রংপুরে সংঘটিত গণহত্যা ও অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এটিএম আজহারুল ইসলাম (ATM Azharul Islam) শেষ পর্যন্ত খালাস পেয়েছেন। মঙ্গলবার (২৭ মে) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ (Dr. Syed Refaat Ahmed)-এর নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করে।
এই রায়ের মাধ্যমে ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যে রায়ে এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল, সেটি বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতিদের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ দীর্ঘ শুনানি ও পুনর্বিবেচনার পরিপ্রেক্ষিতে এই রায় দেয়, যা দেশের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়।
এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধে নয় ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছিল। এর মধ্যে রংপুর অঞ্চলে ১৯৭১ সালে গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ সবচেয়ে গুরুতর ছিল। ট্রাইব্যুনাল ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর তিনটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং দুইটি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছিল। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আপিল বিভাগ আংশিকভাবে দণ্ড বহাল রাখে।
তবে ২০২০ সালে ওই রায়ের পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন আজহারুল ইসলাম। ২৩ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে তিনি ১৪টি যুক্তি তুলে ধরেন। এরপর চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি আদালত তাকে আপিলের অনুমতি দিলে শুনানি শুরু হয়। শুনানির প্রথম দিন ছিল ৬ মে এবং দ্বিতীয় দিন ৮ মে।
আজহারুল ইসলামের পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির (Shishir Monir) আদালতে বলেন, তাদের উত্থাপিত যুক্তির ভিত্তিতে তার মক্কেল নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের ফলে এখন তিনি খালাস প্রাপ্ত হলেন।
এই রায় নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, এটিএম আজহারুল ইসলাম ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর (Jamaat-e-Islami) সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে অন্যতম।
এই রায়ের মাধ্যমে একদিকে যেমন এটিএম আজহারুল ইসলামের দীর্ঘ কারাবাসের অবসান ঘটল, অন্যদিকে এটি মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারিক প্রক্রিয়ার ভবিষ্যত গতিপথ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।