সরকার জাতীয় স্বার্থের চেয়ে বিদেশি স্বার্থকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে—এমন অভিযোগ তুলে করিডর ও বন্দর ব্যবস্থাপনার নামে “বিদেশিদের তাঁবেদারি” নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন রাশেদ খান (Rashed Khan)। মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনাসভায় এ মন্তব্য করেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক।
বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা; সংস্কার ও বাস্তবতা নিয়ে পেশাজীবীদের ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনাসভায় রাশেদ খান বলেন, “সরকার এখন করিডর-বন্দর দেওয়ার খেলায় ব্যস্ত। মনে হচ্ছে দেশ চালানোর বদলে বিদেশি শক্তিকে খুশি করার প্রতিযোগিতা চলছে।”
তিনি দাবি করেন, উপদেষ্টা পরিষদের সংস্কার এখন সময়ের দাবি হলেও সরকার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। “স্বপ্ন দেখান ঠিক আছে, কিন্তু অতিরিক্ত স্বপ্ন দেখিয়ে বাস্তবায়ন না করতে পারলে জাতি হতাশ হবে,” বলেন রাশেদ।
জাতীয় সংলাপের প্রস্তাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটি যেন শুধু চা-নাশতা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ না থাকে। আলোচনার ফলাফল জাতিকে জানান, না হলে সংলাপ ব্যর্থ বলে বিবেচিত হবে।” তার মতে, বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ে একটি স্বচ্ছ রোডম্যাপ না থাকার পেছনে ‘অদৃশ্য রহস্য’ কাজ করছে।
পদত্যাগ নিয়ে গুঞ্জনকে ‘ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জন যদি রাজনৈতিক দলের মুখে শোনা যায়, তাহলে তা জাতিকে বিভ্রান্ত করার ইঙ্গিত দেয়। এ দেশের মানুষ তাঁকে সম্মানিত করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। তবে উপদেষ্টা পরিষদের অন্য সদস্যদের কার্যক্রম কোথায়? এভাবে তো জাতির সামনে ব্যর্থতা উপস্থাপিত হচ্ছে।”
সভায় আরও বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ। তিনি অভিযোগ করেন, “সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি করে একটি গোষ্ঠী রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাচ্ছে।”
তার আশঙ্কা, গণঅভ্যুত্থানের ৯ মাস পার হলেও কাঙ্ক্ষিত সংস্কারের কোনো অগ্রগতি নেই। “যারা গণহত্যার মামলায় অভিযুক্ত, তারা জামিন পেয়ে যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক,” বলেন তিনি।
একইসঙ্গে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ‘কিংস পার্টি’ তৈরির পুরনো প্রক্রিয়া আবার শুরু হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। তার অভিযোগ, এনসিপি নামে একটি দলকে সামনে এনে সেটিকে মাঠে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চলছে, যদিও দলটির কোনো সাংগঠনিক ভিত্তি, মার্কা বা ঘোষণা নেই।
সভায় সভাপতিত্ব করেন জাফর মাহমুদ (Zafar Mahmud), বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদের সভাপতি। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খালিদ হাসান।
অন্যান্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক লতিফ মাসুম, সহ-সভাপতি ড. ইমরান হোসাইন, ড. অ্যাডভোকেট মো. শরিফুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট মেহেদি হাসান, মনিরুল মাওলা, জি এম রোকোনুজ্জামান, বাংলাদেশ শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নেওয়াজ খান বাপ্পী।