জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না থাকলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সরকার এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের (National Consensus Commission) বিরুদ্ধে মামলা করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের (Syed Abdullah Muhammad Taher)। বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত রাজনৈতিক সংলাপের ২৩তম দিনের বিরতিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি এ হুঁশিয়ারি দেন।
তাহের স্পষ্টভাবে বলেন, “আইনি ভিত্তি না থাকলে এই চার্টারে সই করব না। এমন সনদে স্বাক্ষর করার কোনো মানেই নেই।” তিনি আরও যোগ করেন, “সরকার এবং কমিশন যদি সময় নষ্ট করে, তাহলে আমরা কমপেনসেইট (ক্ষতিপূরণ) মামলা করব।”
নির্বাচনী সংস্কারের দাবি
গত পাঁচ দশকের নির্বাচনী অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তাহের বলেন, “বাংলাদেশের নির্বাচন পদ্ধতি দলীয়করণ, দখলদারিত্ব, ভুয়া ভোট এবং রাতের নির্বাচন সংস্কৃতির বিষয়ে রূপ নিয়েছে।” তিনি এর পরিবর্তে বিশ্বের ৯০টির বেশি দেশে বিদ্যমান পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতির উল্লেখ করেন।
তাঁর মতে, “আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়া— সব মহাদেশেই এই পদ্ধতি আছে। ধনী-গরিব, কালো-সাদার ভেদাভেদ ছাড়াই এটি একটি বৈশ্বিক বাস্তবতা। বাংলাদেশেও এই পদ্ধতির প্রবর্তন প্রয়োজন।”
বাস্তবায়নের গুরুত্ব ও নৈতিক চাপ
সংলাপের কঠোর পরিশ্রম ও সময় ব্যয়ের প্রসঙ্গ টেনে তাহের বলেন, “আমরা কষ্ট করে আলোচনা করলাম, আপনারা (সাংবাদিকেরা) কাভার করলেন, কিন্তু যদি বাস্তবায়নই না হয়, তাহলে এসবের কোনো মূল্য থাকবে না।”
তাঁর মতে, শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভর করলে চলবে না— এটি বাস্তব আইনি কাঠামোর অংশ না হলে পুরো চার্টারটি “জিরো”, অর্থাৎ অর্থহীন হয়ে পড়বে।
‘বিপরীত মত’ গণতন্ত্রের অংশ, তবে বিভ্রান্তি নয়
গত ২৩ দিনে সংলাপে যে পরিমাণ ‘নোট অব ডিসেন্ট’ (বিরোধী মত) দেখা গেছে, তা আগের ২২ দিনে দেখা যায়নি বলেও জানান তাহের। তবে তিনি এটিকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই দেখেন। “একজন ‘না’ বলতেই পারেন, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ দল পক্ষে থাকলে সেটিই গ্রহণযোগ্য হয়,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “আইনি ভিত্তি দেওয়া এখনই সম্ভব। অলটারনেটিভ আছে, উদাহরণ আছে। যাঁরা বলছেন এখন দেওয়া যাবে না, তাঁরা জাতিকে বিভ্রান্ত করছেন।”
উচ্চকক্ষের প্রস্তাব
সংসদের উচ্চকক্ষ চালুর প্রস্তাবও দেন জামায়াতের এই নেতা। তাহের বলেন, “এটা শুধু আমাদের মত নয়— উচ্চকক্ষ হলো একটি ‘ব্যালান্স অব অথরিটি’। মূল আইন প্রণয়ন হবে নিম্নকক্ষে, আর উচ্চকক্ষ হবে গাইডিং ও কন্ট্রোলিং বডি।”
এমন এক সময়ে এই বক্তব্য এলো, যখন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ পর্ব একাধিক বিতর্ক ও সংশয়ের জন্ম দিয়েছে। জামায়াতের স্পষ্ট অবস্থান এই প্রক্রিয়ায় নতুন চাপ তৈরি করতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।