প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর আজকের সংলাপ একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই সংলাপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল—প্রতিটি দলের বক্তব্য ও মতামত সরাসরি জনসম্মুখে তুলে ধরা। এতে শুধু প্রধান উপদেষ্টা ও তার উপদেষ্টা পরিষদ নয়, দেশের জনগণও স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছে কোন দল কী বলেছে, তাদের অবস্থান কী, এবং তারা ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে কী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।
আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে এরকম অনেক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে সংলাপ শেষে বিভিন্ন পক্ষ বিভিন্ন বক্তব্য দিয়েছে। একদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর মুখপাত্ররা সংবাদ সম্মেলনে একটি ধরনের বিবৃতি দিয়েছেন, অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস টিম সম্পূর্ণ ভিন্ন বার্তা প্রচার করেছে। এমনকি কখনো কখনো দলগুলো সংলাপের ভেতরে একটি মত উপস্থাপন করলেও বাইরে এসে তা বিকৃত বা পরিবর্তিতভাবে তুলে ধরেছে। ফলে এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তৈরি হয়েছে নানা ধরণের বিভ্রান্তি ও গুজব, যা সাধারণ জনগণের মধ্যে অনাস্থা ও বিভ্রান্তি বাড়িয়েছে।
আজকের সংলাপটি সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে এসব জটিলতা দূর করার একটি কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এই স্বচ্ছতা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় গণমানুষের আস্থা বাড়াবে বলেই আশা করা যায়।
ভবিষ্যতের জন্য আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনুষ্ঠিত সংলাপসমূহ (রাষ্ট্রীয় গোপনীয় তথ্য বাদে) এভাবেই জনসম্মুখে তুলে ধরবে। এতে শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনের স্বচ্ছতাই বাড়বে না, বরং রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিপক্বতাও নিশ্চিত হবে। অনেক অপপ্রচার ও গুজবের অবসান ঘটিয়ে, একটি গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
ঠিক একইভাবে, যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার প্রক্রিয়ার বর্তমান অবস্থা, কোন দল কোন কোন ধারায় একমত প্রকাশ করেছে এবং কোন ধারাগুলিতে একমত নয়—তা কেন নয়, সেই ব্যাখ্যাসহ জনসম্মুখে প্রকাশ করে, তবে অনেক অপপ্রচার ও গুজবের অবসান ঘটানো সম্ভব হবে।
রাজনৈতিক সংস্কৃতি যখন বিকশিত হয় গণমানুষের অংশগ্রহণ ও তথ্য জানার অধিকারের ভিত্তিতে, তখনই তা হয়ে ওঠে গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক। আজকের এই সংলাপ সে পথেই এক বড় পদক্ষেপ—যা দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য এক আশাব্যঞ্জক ইঙ্গিত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা এ জন্য একটা ধন্যবাদ পেতেই পারেন ।
ডাঃ ফেরদৌস কবির
সম্পাদক: তাজাখবর.কম
