গত বছরের জুলাই আন্দোলনে ‘গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত’ দেখিয়ে শেখ হাসিনাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন মোস্তফা কামাল। কিন্তু যার মৃত্যুর কথা বলা হয়েছিল, সেই দুলাল হোসেন ওরফে সেলিম (Selim) এখনও জীবিত। নিজের প্রাণ বাঁচাতে এখন থানায় থানায় ও আদালতে দৌড়াচ্ছেন তিনি।
ঘটনার শুরু ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট। সেলিমের বড় ভাই মোস্তফা কামাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাবি করেন, গত ৩ আগস্ট যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ায় ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে তার ভাই সেলিম নিহত হয়েছেন। আদালতের আদেশে ৩০ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা রেকর্ড হয়। মামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সহ ৪১ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং আরও ১৫০-২০০ নেতাকর্মীকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। মামলার বাদী মোস্তফার ঠিকানা দেওয়া হয় ঢাকার আর কে মিশন রোড, বদী মেম্বারের বাড়ি, মুগদা।
কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারিতে মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ফুলবাড়ীয়া থানার পুলিশ দেখতে পায়, সেলিম জীবিত এবং নিজ গ্রামেই আছেন। ফুলবাড়ীয়ার ওসি মোহাম্মদ রুকনুজ্জামান বলেন, “ভাইদের মধ্যে জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে। মোস্তফা ১৫-১৬ বছর ধরে এলাকা ছাড়া এবং তার নামে দুটি হত্যা মামলা, একটি চাঁদাবাজি ও মারামারির মামলা রয়েছে।”
সেলিম জানান, তার জীবিত থাকা সত্ত্বেও বড় ভাই তাকে ‘মৃত’ দেখিয়ে হত্যা মামলা করে। তিনি বলেন, “এটা একটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। তারা আমাকে সরকারিভাবে লাশ বানিয়ে ফেলতে চেয়েছিল। আন্দোলনের সময় আমি এলাকায় ছিলাম না। থাকলে তারা আমাকে সত্যিই মেরে ফেলত।”
সেলিম আরও জানান, তার কোনো পুত্রসন্তান না থাকায় ১৫ বছর আগে স্ত্রী হাজেরা খাতুন ও দুই মেয়েকে ৪৯ শতক জমি লিখে দেন। এরপর থেকেই বড় ভাই হেলাল উদ্দিন ও আবুল হোসেনের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ চরমে ওঠে। এমনকি ২০২২ সালে তাকে গুরুতর জখমও করা হয়। সে ঘটনায় তিনি থানায় মামলা করেন। এরপর এলাকা ছেড়ে ধামর বেলতলী বাজারে আড়াই শতক জমি কিনে ঘর তুলে বসবাস শুরু করেন। সেখানে একটি মুদি দোকান চালান তিনি।
সেলিম বলেন, “আমি এখন আমার জীবিত থাকার প্রমাণ দিতে থানায় গেছি, আদালতেও গেছি। দুইবার আদালতে গেছি, বহুবার থানায় গেছি।” তিনি নিজের ভাইদের বিচারের দাবি জানান।
এদিকে বাদী মোস্তফা কামালের এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তার বাড়ি ফাঁকা, তিনি পলাতক। তার স্ত্রী হাজেরা খাতুন বলেন, “আমার স্বামীরে আন্দোলনে মারা গেছে দেখাইয়া আমার ভাশুরে মামলা করছে। সে বাড়িতে থাকলে তারা মাইরা ফেলত।”
তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিবির তৃতীয় কর্মকর্তা এসআই আমিনুল ইসলাম জানান, “বাদীকে পাওয়া যাচ্ছে না। যাকে নিহত বলা হয়েছে তিনি বেঁচে আছেন বলে দাবি করছেন। তিনি বাদীর ভাই কি না, তা নিশ্চিত হতে আদালতে ডিএনএ পরীক্ষার অনুমতি নেওয়া হয়েছে।”
ফুলবাড়ীয়া থানার ওসি বলেন, “সেলিম আমার কাছে এসে বিস্তারিত জানিয়েছে। তাকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। মামলা যিনি করেছেন সেই মোস্তফা কামাল এখন পলাতক। তিনি ঢাকায় বাসচালক হিসেবে কাজ করেন বলেও শুনেছি।”
মামলার পর বাদী মোস্তফাসহ সেলিমের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।