ট্রাম্প’র অভিবাসন নীতির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে ১১৮ বাংলাদেশি

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া অভিবাসন নীতির কারণে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১১৮ বাংলাদেশি নাগরিককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে ১১১ জন পুরুষ এবং সাতজন নারী রয়েছেন। সর্বশেষ ঈদুল আজহার পরদিন, ৮ জুন, একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ৪২ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয় বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) এবং শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগ।

ইমিগ্রেশন পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ফেরত পাঠানো বাংলাদেশিদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা হয়েছে। কারো হাতকড়া পরানো হয়নি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে আগেভাগেই জোরালো অনুরোধ জানানো হয়েছিল এবং যুক্তরাষ্ট্র তা মেনে নেয়। এর আগেও, ৮ এপ্রিল আরেকটি চার্টার্ড ফ্লাইটে একইভাবে ৪২ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। তবে ওই ফ্লাইটে থাকা ১৬ জনের পূর্ণ পরিচয় নিশ্চিত করতে না পারায় ইমিগ্রেশনে জটিলতা দেখা দেয়। দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা যাচাই-বাছাইয়ের পর তাদের গ্রহণ করে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ।

প্রসঙ্গত, ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন। ভারত, ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের হাতকড়া পরিয়ে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তবে বাংলাদেশিদের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে।

ফেরত আসাদের মধ্যে পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। তাদের মধ্যে একজন অভিবাসন-সংক্রান্ত মামলায় হেরে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন, আরেকজনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ছিল। তারা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর ফেরত পাঠানো হয়।

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর বাসিন্দা ইমরান হোসেন জানান, তাঁকে টেক্সাস থেকে ফ্লাইটে তোলা হয়। একই ফ্লাইটে ছিলেন আরেক বাংলাদেশি সাব্বির আহমেদ ও সুমন। সুমন জানান, গত বছরের ১১ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন তিনি। এই যাত্রাপথে তাঁকে ৬৫ লাখ টাকা দালালকে দিতে হয়েছে। কাতার হয়ে ব্রাজিল, সেখান থেকে বলিভিয়া, পেরু, ইকুয়েডর, কোস্টারিকা, পানামা, হুন্ডুরাস, মেক্সিকোসহ বেশ কয়েকটি দেশ পাড়ি দিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় পৌঁছান। সেখানেই তাকে আটক করে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন পুলিশ। পরবর্তীতে তাঁকে টেক্সাসে পাঠানো হয়।

ইমরান জানান, ফ্লাইটে কারো হাতকড়া ছিল না এবং শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর ব্র্যাক (BRAC) থেকে সহায়তা পেয়েছেন তারা।

সম্প্রতি, অভিবাসনবিরোধী পদক্ষেপে আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। বিশেষ করে যারা ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, এমন বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ভারতের নাগরিকদের হাতকড়া পরিয়ে সামরিক বিমানে ফেরত পাঠানোর ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসনবিরোধী অভিযানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *