‘তোরা তো পুলিশ মারছিস, ফাঁড়ি জ্বালাইছিস’ বলেই জুলাই যোদ্ধাকে মারলেন এএসআই

সিলেট শহরের লামাবাজারে পুলিশের এক সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) বিরুদ্ধে এক সময়ের জুলাই যোদ্ধা ইসলাম উদ্দিনকে প্রকাশ্যে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। ইসলাম উদ্দিন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আজ অটোরিকশা চালাতে অক্ষম; জীবিকার জন্য একটি ছোট চায়ের দোকান চালান। শনিবার (২১ জুন) সকালে দোকান খুলতেই হামলার শিকার হন তিনি।

ভুক্তভোগী ইসলাম উদ্দিন বলেন, ফজরের নামাজের পর দোকান খুলতেই এএসআই জসিম এসে প্রশ্ন করেন, “এত সকালে দোকান খোলা কেন?” এরপর কোনো প্রকার ব্যাখ্যা না শুনেই লাথি-ঘুষি শুরু করেন। ইসলাম উদ্দিন নিজেকে গেজেটভুক্ত জুলাই যোদ্ধা পরিচয় দিয়ে অনুরোধ জানান, তাকে যেন হেনস্তা না করা হয়। তিনি বলেন, “আমাকে জেলে দিলে আমার পরিবার না খেয়ে মরবে।”

তবে পুলিশের এএসআই জসিম তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, “তুই যোদ্ধা! তোরা তো পুলিশ মারছিস, ফাঁড়ি জ্বালাইছিস”—এই বলে পুনরায় মারধর শুরু করেন এবং পুলিশ ভ্যানে তোলার চেষ্টা করেন। এক কনস্টেবলের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত তাঁকে রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যান জসিম ও তাঁর সহকর্মীরা।

ঘটনার পর আহত ইসলাম উদ্দিনকে ভর্তি করা হয় সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-এ। হাসপাতালের উপপরিচালক সৌমিত্র চক্রবর্তী জানান, তার অবস্থা আপাতত আশঙ্কাজনক নয়, তবে সিটি স্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট এলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত এএসআই জসিমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করে কেটে দেন এবং মেসেজেরও জবাব দেননি।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) উপকমিশনার (উত্তর) মো. শাহরিয়ার আলম জানান, অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর-ক্রাইম) সাহাদত হোসেনকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত শেষ হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে সিলেট জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (বৈছাআ) ও জুলাই যোদ্ধাদের সহযোদ্ধারা। তাঁরা বলেন, একজন আহত মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে এমন আচরণ অনভিপ্রেত ও লজ্জাজনক। দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযুক্ত কর্মকর্তার গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান তাঁরা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *