সাবেক টিভি উপস্থাপক ও বিশিষ্ট সাংবাদিক জিল্লুর রহমান (Zillur Rahman) বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী যদি নির্বিঘ্নে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে, তবে আওয়ামী লীগ (Awami League)-কে নির্বাচন থেকে নিষিদ্ধ করার যৌক্তিকতা কোথায়? সম্প্রতি তার ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক মন্তব্যভিত্তিক ভিডিওতে তিনি এই প্রশ্ন তোলেন এবং বলেন, নিষিদ্ধ রাজনীতির বদলে অপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়েই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, “অনেকে বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমা চাইতে হবে—সেটি আমিও বলি। কারণ এই দলটি ইতিহাসের নানা সময়ে গণতান্ত্রিক পথচলায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। কিন্তু একই সঙ্গে জামায়াতকে যদি আমি ক্ষমা চাইতে বলি, সেটা কি অন্যায় হবে? জামায়াত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী ছিল, আজ পর্যন্ত কোনো অনুশোচনা প্রকাশ করেনি।”
জিল্লুর রহমান উল্লেখ করেন, আওয়ামী লীগ জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার কথা বহুবার বললেও আইনি বা সাংগঠনিকভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। একইভাবে, কোনো গোষ্ঠী বা কর্তৃপক্ষ যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চায়, তাও টিকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তার মতে, ৮ জুন রাত থেকেই তিনি ‘ইনক্লুসিভ ইলেকশন’ অর্থাৎ সব দলকে নিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে কথা বলে আসছেন। এটি আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতি নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস, নাগরিক অধিকার এবং গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধার জায়গা থেকে এই অবস্থান।
জিল্লুর বলেন, “আওয়ামী লীগের প্রতিটি অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক—আমি সেটাই চাই। কিন্তু যারা নিরপরাধ, যারা কেবল রাজনৈতিকভাবে সম্পৃক্ত, তাদের মৌলিক অধিকার—যেমন ভোট দেওয়া ও ভোটে অংশগ্রহণের অধিকার কেড়ে নেওয়া ঠিক হবে না। এ দলটিরও একটি রাজনৈতিক ইতিহাস আছে, বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এই অবস্থান বিএনপি বা আগামীতে যারা ক্ষমতায় যাবেন, তাদের জন্যও উপকারী। শেখ হাসিনার আমলে একতরফা নির্বাচন যেমন প্রশ্নবিদ্ধ ছিল, তেমনি যারা এখন নতুন করে গণতন্ত্রের কথা বলছেন, তাদের উচিত সবার জন্য সমান নীতি প্রয়োগ করা।”
জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশন (UN Human Rights Commission)-এর মন্তব্য উল্লেখ করে জিল্লুর বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে যে আইন আনা হয়েছে, তা নিয়েও আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এর ফলে দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ আরও সংকটে পড়তে পারে।
তিনি বলেন, “আমার বক্তব্য আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠা করা নয়, ভারতকে খুশি করা নয়, বরং তাদেরও যেটুকু অধিকার আছে—সেটা রক্ষা করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সামনে রেখে, সমতার ভিত্তিতে বিচার ও নির্বাচনের পথেই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।”