বাংলাদেশের অর্থনীতি সামলাতে বড় স্বস্তি এনে দিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF)। সংস্থাটি তাদের বোর্ড সভায় সোমবার বাংলাদেশকে ১ দশমিক ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে, যা চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একত্রে ছাড়ের মধ্য দিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
১২ মে আইএমএফ ও বাংলাদেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের ফলেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওইদিন ‘স্টাফ লেভেল এগ্রিমেন্ট’ চূড়ান্ত হওয়ার পর আইএমএফ চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একত্রে ছাড় করতে সম্মত হয়। এর আগে বাংলাদেশ তিন কিস্তিতে মোট ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছিল।
ড. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংক এর ডেপুটি গভর্নর, জানান, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে বোর্ড সভায় ঋণ ছাড়ের সিদ্ধান্ত হয়। তিনি বলেন, “আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে ১.৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড় করা হয়েছে। এটি পূর্ব চুক্তি অনুযায়ী হয়েছে।”
ঋণ ছাড়ের বিষয়টি আইএমএফ দ্রুত তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সরকারকে ই-মেইলের মাধ্যমে জানাবে বলে জানা গেছে। তবে এখনও আইএমএফের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, “আইএমএফ সাধারণত নিশ্চিত হতে কিছুটা সময় নেয়। তবে আজকেই বিস্তারিত জানাবে বলে আশা করছি।”
এই অর্থ সরাসরি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে যোগ হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত দেশের মোট রিজার্ভ ছিল ২৬.৮৩ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ‘বিপিএম ৬’-এর হিসাব অনুযায়ী যা দাঁড়ায় ২১.৭৫ বিলিয়ন ডলার। নতুন ঋণ যোগ হলে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়াবে ২৮.১৩ বিলিয়ন ডলারে।
আইএমএফের নির্ধারিত জুন মাসের নিট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (NIR) লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০.১১ বিলিয়ন ডলার। তবে বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সরকার তা ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে রাখার প্রস্তাব দেয়, যা আইএমএফ গ্রহণ করে। বর্তমানে এনআইআর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের রিজার্ভ রয়েছে প্রায় ১৭.৫ বিলিয়ন ডলার। নতুন ঋণের অর্থ যুক্ত হলে তা বেড়ে হবে প্রায় ১৮.৮ বিলিয়ন ডলার, যা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই অর্থ ছাড় রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহের চাপে থাকা দেশের অর্থনীতিকে কিছুটা প্রশমিত করবে। তবে এটি টেকসই উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট কি না, তা নির্ভর করবে পরবর্তী নীতিনির্ধারণী পদক্ষেপের ওপর।