জুলাই যোদ্ধারা আগামী মাস থেকে ভাতা পাবেন : মুক্তিযুদ্ধ উপদেষ্টা

১৯৭১ সালের পূর্ববর্তী ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থান–এর অংশ হিসেবে আহত ‘জুলাই যোদ্ধারা’ আগামী মাস থেকেই মাসিক ভাতা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম (Faruk-e-Azam)। একইসঙ্গে আজীবন বিনামূল্যে সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগও থাকছে তাদের জন্য।

সোমবার সচিবালয়ে একান্ত সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে এসব তথ্য জানান উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। তিনি বলেন, “যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করতে আমাদের ৫৪ বছর লেগেছে, অথচ আমরা মাত্র সাত-আট মাসেই জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করে ফেলেছি।” এই উদ্যোগকে অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিকতার প্রতিফলন বলেই তিনি মনে করেন।

জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনের জন্য ইতোমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি স্বতন্ত্র অধিদপ্তর গঠন করা হয়েছে। ১০ম তলায় গঠিত এই অধিদপ্তরে ২০ জন কর্মকর্তা কাজ করছেন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে।

আহত যোদ্ধাদের জন্য তিনটি ক্যাটাগরি নির্ধারণ করা হয়েছে—‘এ’, ‘বি’, এবং ‘সি’।
– ‘এ’ ক্যাটাগরিতে রয়েছেন ৪৯৩ জন গুরুতর আহত যোদ্ধা, যারা এখন আর স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন না। তারা এককালীন ৫ লাখ টাকা এবং মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। ইতোমধ্যে তারা পেয়েছেন ২ লাখ টাকা, বাকি ৩ লাখ দেয়া হবে আগামী জুলাইয়ে।
– ‘বি’ ক্যাটাগরিতে রয়েছেন ৯০৮ জন, যারা আংশিক সহায়তায় চলাফেরা করতে সক্ষম। তারা এককালীন ৩ লাখ টাকার মধ্যে ১ লাখ পেয়েছেন, বাকি ২ লাখ পাবেন পরের মাসে। মাসিক ভাতা পাবেন ১৫ হাজার টাকা করে।
– ‘সি’ ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত ১০ হাজার ৬৪২ জন বর্তমানে সুস্থ। তারা এককালীন ১ লাখ টাকা পেয়েছেন এবং আগামী মাস থেকে মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন।

শহীদদের স্বীকৃতি দিয়ে তাদের নাম ‘জুলাই শহীদ’ এবং আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ৮৩৪ জন শহীদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। তাদের প্রত্যেক পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা করে পাবেন, যার প্রথম কিস্তি হিসেবে ১০ লাখ টাকা ইতোমধ্যে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। বাকি ২০ লাখ দেওয়া হবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে। সেইসঙ্গে মাসিক ২০ হাজার টাকা করে ভাতা এবং সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার সুবিধা পাচ্ছেন পরিবারের সক্ষম সদস্যরা।

উপদেষ্টা জানান, গুরুতর আহত সাতজন যোদ্ধাকে ইতোমধ্যে তুরস্কে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়া থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে অন্যদেরও। চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানো, কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

আবেগভরা কণ্ঠে ফারুক-ই-আজম বলেন, “বাংলাদেশ আজীবন জুলাই যোদ্ধাদের ত্যাগকে স্মরণে রাখবে। আমরা চাই, কেউ যেন ভুলে না যায় এই ইতিহাস। শহীদদের অনেকের খোঁজ আমরা হয়তো রাখতে পারিনি। তবু কেউ যদি এসে দাবি করেন যে, তার স্বজন নিখোঁজ হয়েছেন, তাহলে গণকবর থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে হলেও তাদের পরিচয় নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে সরকার।”

উল্লেখযোগ্যভাবে, অন্তর্বর্তী সরকার ৫ আগস্টকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে জাতীয়ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপদেষ্টা জানান, শহীদ পরিবারের ১৩৪টি পরিবার এখনও ওয়ারিশ জটিলতায় ভাতা পাননি, তবে সেটি দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আহতদের তালিকায় যেসব ভুল ধরা পড়েছে, সেগুলোও সংশোধনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *