গঙ্গার পানি বণ্টনে ‘নতুন খেলা’ ভারতের, বাংলাদেশকে চাপে রাখতে চুক্তি সংশোধনের চেষ্টা

পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু নদী চুক্তি ঝুলিয়ে দেওয়ার পর এবার বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়েও ‘পুনর্বিবেচনা’ শুরু করেছে নয়াদিল্লি। ১৯৯৬ সালের ঐতিহাসিক চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভারত এখন তার তথাকথিত ‘জাতীয় স্বার্থে’ উছিলায় এই চুক্তির শর্তাবলি বদলাতে চাইছে—যা পর্যবেক্ষকদের মতে, সরাসরি বাংলাদেশের পানিপ্রবাহের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল।

ইকোনোমিক টাইমস-এর বরাতে জানা গেছে, নয়াদিল্লি ইতোমধ্যে বিকল্প চুক্তির কথা ভাবছে, যেখানে তাদের সেচ, বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষণাবেক্ষণের চাহিদা অগ্রাধিকার পাবে। অথচ এই চুক্তি ছিল উজানের দেশ ভারত (India) ও ভাটির দেশ বাংলাদেশ (Bangladesh)-এর মধ্যে দীর্ঘদিনের এক চুক্তি ।

১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) প্রথম প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় স্বাক্ষরিত এই চুক্তি গ্রীষ্মকালীন শুষ্ক মৌসুমে ফরাক্কা থেকে গঙ্গার পানিপ্রবাহ ভাগাভাগির কাঠামো নির্ধারণ করে দেয়। চুক্তি অনুযায়ী, উভয় দেশ পর্যায়ক্রমে প্রতি ১০ দিনে ৩৫,০০০ কিউসেক পানি পায়। কিন্তু এখন ভারত অতিরিক্ত ৩০,০০০ থেকে ৩৫,০০০ কিউসেক পানি দাবি করছে, যা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের জন্য নেমে আসবে পানির চরম সংকট।

ফরাক্কা বাঁধ—যা বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে এবং ভাগীরথী নদীর ওপর নির্মিত—কলকাতা বন্দরের জন্য প্রতিদিন ফিডার খালে প্রায় ৪০,০০০ কিউসেক পানি সরিয়ে নেয়। অতিরিক্ত পানি চাওয়ার মানে হলো, উজানেই পানি আটকে রেখে ভাটির বাংলাদেশকে শুকিয়ে ফেলা।

ভারতের এই অবস্থানকে অনেকে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিতে পানি ব্যবস্থাপনার ওপর আধিপত্য বিস্তারের একটি স্ট্র্যাটেজি হিসেবে দেখছেন। পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু চুক্তি ঝুলিয়ে দিয়ে নয়াদিল্লি যে বার্তা দিতে চেয়েছিল, এবার বাংলাদেশ সেই চাপের পরবর্তী শিকার।

সূত্র জানায়, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার একই সুরে বলছে—চলমান চুক্তি পশ্চিমবঙ্গের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, গঙ্গার পানি নিয়ে মূল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশ, যেখানকার উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দীর্ঘদিন ধরেই নদীর স্বাভাবিক প্রবাহের অভাবে কৃষি, জীববৈচিত্র্য ও জনজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

এই প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতের পক্ষ থেকে চুক্তি সংশোধনের প্রচেষ্টা একধরনের ‘জল-রাজনীতি’, যেখানে বড় রাষ্ট্র ছোট প্রতিবেশীর ওপর নিজের চাহিদা চাপিয়ে দিতে চায়। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলেও এই পদক্ষেপ উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।

২০২৬ সালে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও ভারতের আগেভাগেই ‘চাপ তৈরির কৌশল’ প্রশ্ন তুলছে—এটি কি সত্যিই গঠনমূলক আলোচনার প্রস্তুতি, নাকি নতুন করে একতরফা আধিপত্য চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *